ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক-জুয়া

কেশবপুরে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক-জুয়া

যশোরের কেশবপুরের গ্রামাঞ্চলে মাদক ও মোবাইলে জুয়ার প্রসারতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশি অভিযানেও এসব বন্ধ না হওয়ায় সচেতন মহলসহ অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়ছে। মাদকসেবীদের মাদক পরিহার, ক্যারম বোর্ড ও মোবাইলে জুয়া খেলা থেকে বিরত থাকার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া এসবের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে মাইকিং করা হচ্ছে। এদিকে, দেশে অনলাইন জুয়ার বেটিং সাইড বন্ধের বিষয়ে সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনেও বক্তব্য দিয়েছেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম। উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নে মাদক বিক্রি, সেবনকারী ও চায়ের দোকানে ক্যারম বোর্ড খেলার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মাইকিং করায় সচেতন মহল খুশি হলেও এর বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সি যুবকরা মাদক ও অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবক মহলও এখন শংকিত। পুলিশি অভিযান চললেও এরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নেশার টাকা জোগাতে ছোট ছোট অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে এর বিস্তার বেশি লাভ করেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলের মোড়ে মোড়ে তৈরি করা দোকানপাটে আড্ডার পাশাপাশি মাদক সেবন এবং তাস, ক্যারম ও মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া মাছের ঘেরের টংঘরে আড্ডা জমে উঠেছে মাদকসেবীদের। কেশবপুর উপজেলা একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে উপজেলার মজিদপুর বাজার, শ্রীফলা, প্রতাপপুর চৌরাস্তা মোড়, দেউলি মোড়, শ্রীরামপুর, শহরের মাছ বাজারে, ট্রাক টার্মিনাল, মধ্যকুল স্লুইস গেট ও তেল পাম্প, ভোগতী এলাকার শীতলাতলা মোড়, নতুন মূলগ্রাম মাঠ, মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনের বাগানে, পাঁজিয়া বাজারের বাগডাঙ্গা মোড়ে, বাংলালিংক গলি ও নাথ পাড়া সংযোগ সড়কে, আলতাপোল, হাসানপুর, টিটাবাজিতপুর, বুড়িহাটি, চিংড়া, সাগরদাঁড়ি, মঙ্গলকোট, চুয়াডাঙ্গা, কর্ন্দপপুর, সন্যাসগাছা ব্রীজের মাথা, কলাগাছি, কাটাখালি এলাকায় স্থানীয় ও বহিরাগত যুবকেরা এসে মাদক ব্যবসাসহ সেবন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর এসব স্থানে জুয়া এবং মাদক বিকিকিনি ও সেবনের আড্ডা জমে ওঠে।

কেশবপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে কেশবপুর থানা, গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান পরিচালনা করে মাদক উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেফতার করলেও থামছে না মাদকের ছোবল। গত ১ জুলাই থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বিভিন্ন মাদক বিক্রির সম্ভাব্য স্থানগুলোতে হানা দিয়ে থানা পুলিশের অভিযানে ৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা ও গাঁজা। মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর পলাশ বলেন, তার ইউনিয়নের মজিদপুর বাজার, শ্রীফলা, প্রতাপপুর চৌরাস্তা মোড়, শ্রীরামপুর ও দেউলী মোড়, মির্জাপুর, জামালগঞ্জ বাজার এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের আনাগোনা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সি যুবকরা। এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গত ৮ জুলাই মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মাইকে প্রচার করার পর অভিভাবক মহল খুশি হলেও এর বাস্তবায়ন আদৌ হবে কি না তা নিয়েও সচেতন মহলে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দ্রুত তার ইউনিয়নের মজিদপুর বাজার, চৌরাস্তা মোড়, জামালগঞ্জ বাজার, শ্রীফলা, প্রতাপপুর চৌরাস্তা মোড়, শ্রীরামপুর বাজার ও মির্জাপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে বটগাছ তলায়, বসুন্তিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও রামকৃষ্ণপুর এলাকায় মাদক বিক্রেতা এবং সেবনকারীদের আনাগোনা দেখা যায়। সম্প্রতি মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল হতবাক হয়ে পড়েছেন। তিনিও দ্রুত এর প্রতিকার চান। কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলা উদ্দীন বলেন, সম্প্রতি অনলাইন জুয়া ও মাদকদ্রব্য বিকিকিনিসহ সেবনকারীদের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। দ্রুত এদেরকে প্রতিহত করতে না পারলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। এছাড়া অসংখ্য শিক্ষার্থী পাঠদান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

উপজেলা নাগরিক সমাজের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, পৌর শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও মাদক ও জুয়ার প্রসারতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখনই যদি এদের রুখে দেওয়া না যায়, তাহলে যুব ও শিক্ষার্থীসহ কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। কেশবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মফিজ বলেন, কেশবপুর থেকে মাদক মুক্ত করে একটি মডেল উপজেলা গড়তে হবে। তার জন্য প্রশাসনের সাথে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌর শহরে মাদক ও জুয়ার প্রসারতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত