গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক একটি মৎস্য খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। বিগত কয়েক দিন দেশের চলমান কোটা আন্দোলনের সময় অস্থির পরিস্থিতির সুযোগে ওই মাছ লুট করা হয়। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ যৌথ চার খামারি। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য খামারিদের সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার পিপঁড়াসিট কাকচালা এলাকার আবুল কালাম আজাদ ও সেলিম সিকদার, জিংগাহাটি এলাকার আকতার হোসেন এবং গাছবাড়ী এলাকার জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে যৌথভাবে মৎস খামার করে আসছেন। এ ধারাবাহিকতায় তারা এ বছরও উপজেলার নলোয়া এলাকায় স্নেহ মৎস্য খামার নামে একটি ও গোসাইবাড়ী এলাকায় সাহেবেরচালা মৎস্য খামার নামে চারটি মৎস্য খামার করেন। এর মধ্যে স্নেহ মৎস্য খামারে নারিশ কোম্পানির এবং সাহেবের চালা মৎস্য খামারে বিশ্বাস পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডস লিমিটেড কোম্পানির ফিড খাওয়ানো হয়। এ লক্ষ্যে খামারিদের সঙ্গে পৃথক পৃথক ভাবে চুক্তিনামা করে ওই দুটি কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু সাহেবের চালা মৎস্য খামারে বিশ্বাস কোম্পানির নিম্নমাণের ফিড ব্যবহারে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হন খামারিরা। এ লোকসানের কারণে বিশ্বাস কোম্পানির বকেয়া টাকা দিতে পারছিল না খামারিরা। কিন্তু বিশ্বাস কোম্পানির বকেয়া ৮০ লক্ষ টাকা আদায় করতে ওই খামারিদের আরেকটি স্নেহ মৎস্য খামারে হানা দেয় বিশ্বাস কোম্পানির লোকজন। গত ১৭ জুলাই থেকে মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে খামারিদের দূরে রেখে জোরপূর্বক মাছ মেরে নিয়ে যায় ওই বিশ্বাস কোম্পানি। এভাবে বিশ্বাস কোম্পানি ওই খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ জোরপূর্বক লুটে নিয়েছে বলে খামারিদের অভিযোগ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ যৌথ চার খামারিরা ও ৪০ লক্ষ টাকার ফিড সরবরাহকারী নারিশ কোম্পানি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ খামারি আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালিয়াকৈর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে গত শনিবার ও রোববার তদন্তে গিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারি আকতার হোসেন বলেন, বিশ্বাস কোম্পানির লোকজন যে স্নেহ মৎস্য খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুট করে, সে খামারের সাথে নারিশ কোম্পানির চুক্তিপত্র ছিল। মামলা ও হামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের দুরে রেখে ওই বিশ্বাস কোম্পানির লোকজন মাছ লুট করে। অন্য খামারি সেলিম সিকদার বলেন, বিশ্বাস কোম্পানি প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার বেশি আমাদের কাছে পাবে। আমরা কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের বলেছি, আরেক খামারের মাছ বিক্রি করে পর্যায়ক্রমে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবো। কিন্তু বিশ্বাস কোম্পানি জোরপূর্বক বকেয়া ৮০ লক্ষ টাকা আদায় করতে গিয়ে আমাদের খামারের প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুট করে।
আরেক খামারি আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বাস কোম্পানির নিম্নমানের ফিড খাওয়াইয়া আমরা ৮০ লক্ষ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছি। সে টাকা আমরা ধীরে ধীরে দিয়ে দিতাম। কিন্তু তারা জোরপূর্বক নারিশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারের মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এখন নারিশ কোম্পানির পাওনা ৪০ লক্ষ টাকা দেয়ার উপায় নেই। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। অন্য খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্বাস কোম্পানি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের উপস্থিত রেখে মাছ ধরতে পারতো। তাদের ৮০ লক্ষ টাকার বদলে তারা প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকার মাছ লুটে নিলো। তাদের পাওনা টাকা রেখে বাকি ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা আমরা ফেরত চাই।
ওই মৎস্য খামারের মাছ ধরা অন্যায় হয়েছে স্বীকার করে অভিযুক্ত বিশ্বাস কোম্পানির প্রজেক্ট সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ জানান, খামারিদের অনুমতিক্রমে আমার কোম্পানি ১৭ জুলাই থেকে এখানে মাছ ধরছে। কিন্তু বার বার বলার পরও খামারিরা এখানে উপস্থিত থাকেন না। এই কদিনে ১০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছি, তার সব রশিদ আছে। পরে বসে তাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। তবে দুই কোটি টাকার মাছ নেয়ার কথা অস্বাীকার করে ওই কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রাজ্জাক মুঠোফোনে জানান, আমরা ওই খামারিদের কাছে ফিডের মূল্য বাবদ ৮৬ লক্ষ টাকা পাওনা আছি। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল, তারা যদি সাহেবের চালা খামারের মাছ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। তাহলে ওই স্নেহ মৎস্য খামার থেকে বাকি টাকার মাছ ধরতে পারবো। এ ধারাবাহিকতায় ওই খামার থেকে মাছ ধরা হয়।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, এ ঘটনায় খামারি পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মিমাংসার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
