হাতে তৈরি ক্রিকেট ব্যাট যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এমএ কবীর, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের মহেশপুরে হাতে তৈরি ক্রিকেট ব্যাট যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নিজেদের তিনটি কারখানায় প্রতিদিন ২ শতাধিক ছোট-বড় ব্যাট তৈরি হচ্ছে। আর এই ব্যাট দিয়ে মাঠ কাঁপিয়ে অনেকেই হচ্ছেন তারকা ক্রিকেটার। গত ২৪ বছর ধরে তারা এই ব্যাট তৈরির কাজ করছেন।
কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জন বেকারের। উপজেলার বাথানগাছি গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ, সাধন দাস ও শ্যামল দাস নিজেদের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন এই ব্যাট কারখানা। সরেজমিন মহেশপুর উপজেলার মান্দাড়বাড়ীয়া ইউনিয়নের বাথানগাছি মিস্ত্রি পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাড়িতে পাশাপাশি তিনটি কারখানা। কোথাও পড়ে আছে কাঠের টুকরো, কোথাও ছোট ছোট কাটিং মেশিন, কেউ কেউ কাঠ পরিষ্কার করছেন। অনেকে লাগচ্ছেন কাভার কিংবা লোগো। কথা হয় একটি কারখানার মালিক রাজেন্দ্রনাথের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ২৪ বছর ধরে তারা তিন ভাই মিলে তিনটি কারখানা পরিচালনা করছেন। প্রতিদিন এই কারখানায় ১০০ থেকে ১৫০টি বিভিন্ন ধরনের ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করা হয়ে থাকে। তাদের কর্মচারী আছে ২০ জন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা ব্যাট কেনার অগ্রীম অর্ডার দেন। প্রকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি দরে তারা ব্যাট বিক্রি করেন। তিনি জানান প্রতিটি ব্যাটে গড়ে ৪০-৫০ টাকা লাভ থাকে। রাজেন্দ্রনাথ আরও জানান, তারা মূলত ঝিনাইদহ শহর এলাকার আরাপপুর থেকে ব্যাট তৈরি কাঠ সংগ্রহ করে থাকেন। কাঠগুলো বাড়িতে এনে ভালো করে শুকিয়ে নেন। পরে এগুলো ছোট কার্টার মেশিনে কাটা হয়, এরপর পরিষ্কার করার মেশিনে কাজ করে আঠা দিয়ে ব্যাটগুলো সেট করা হয়। পরে আবারও ভালোভাবে শুকানোর পর তার ওপর স্টিকার এবং লোগো লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়। তিনি বলেন, হাতে তৈরি এই ব্যাট বিক্রি করে পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন, ৩ বিঘা জমি কিনেছেন একটি দামি মোটরসাইকেলও কিনেছেন। ক্রিকেট ব্যাট তৈরির এই কারখানায় কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারীরা বলেন, তারা অনেক দিন ধরে ব্যাট তৈরির কাজে জড়িত। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা হাজিরায় কাজ করেন তারা। এখানে প্রতিদিন ছোট-বড় সাইজের রকমারি ব্যাট তৈরি করা হয়। যারা ক্রিকেট খেলেন তারা প্রায় এখান থেকে ব্যাট কিনে নিয়ে যায়।
এছাড়াও ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এই কারখানা থেকে ব্যাট কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। আর একটি কারখানার মালিক শ্যামল দাস বলেন, তাদের এই কারখানা আরো বড় করতে চান। এখানে তৈরিকৃত ব্যাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারি না। তবে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যেত তা হলে এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হতো আবার এই কারখানা আরো বড় করা যেত। স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশিদ এবং সঞ্জিত কুমার বলেন, তাদের গ্রামের কারখানায় তৈরি ক্রিকেট ব্যাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দক্ষ কারিগর এবং ভালোমানের কাঠ দিয়ে তৈরি করার কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ব্যাট কিনে নিয়ে যায়। ব্যাট তৈরির এই কারখানার সুনাম দেশব্যাপী। আমরা এই তিন ভাইকে নিয়ে গর্বিত। অনেকে আবার এই ব্যাট তৈরির কারখানা দেখতে আমাদের গ্রামে আসে। এটা দেখে অনেকে উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ পান।