নবীনগরে ঋণের চাপে মা-মেয়ের আত্মহত্যা
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সামাজিক অস্থিরতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে, গত ২৮ জুলাই নবীনগর সদরে একই পরিবারের চারজন ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার একদিন যেতে না যেতেই ৩০ জুলাই মা-মেয়ে ঋণের চাপে পড়ে কেড়ির বড়ি খেয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ও কাঠালিয়া গ্রামে। পুলিশ দুজনের লাশ উদ্ধার করে রাতেই নবীনগর থানায় নিয়ে আসেন। জানা যায়, নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার মজিবুর রহমানের স্ত্রী নূরতারা বেগম (৫৫) বিভিন্ন সমিতি থেকে ক্ষুদ্রঋণ তুলেছিলেন এবং তার মেয়ে কাঠালিয়া গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী সবুজ মিয়ার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার (২৬)-এর কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার এনেছিলেন, মেয়ের টাকা-স্বর্ণালংকার দিতে না পারায় ও সমিতির কিস্তির চাপে পরে মা-মেয়ে পরামর্শ করে তারা দুজন কেড়ির বড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করবে। পরামর্শ মোতাবেক গত মঙ্গলবার দুপুরে নাতিনের হাত দিয়ে কাঠালিয়া গ্রামে মেয়ের কাছে কেড়ির বড়ি পাঠিয়ে দেয় নূরতারা বেগম। ওইদিনই দুপুরে প্রথমে মা কেড়ির বড়ি খেয়ে মেয়েকে ফোনে জানালে মেয়েও কেড়ির বড়ি খেয়ে ফেলে। পরিবারের লোকজন মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে এলে ডাক্তার মা-মেয়েকে ওয়াস করে কুমিল্লায় রেফার করেন। কুমিল্লা নেওয়ার পথিমধ্যে দুজনেই মারা যায়। সোনিয়া আক্তার অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং রয়েছে দুই মেয়ে। সোনিয়া আক্তারের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাত বলেন, সকালে আম্মা আমাকে বলেছে, তোর নানি রাস্তায় আসবে, তোকে ১ হাজার টাকার দিতে এবং সাথে একটা ব্যাগ দিবে, কেউ যেন জানতে না পারে। আমি নানির কাছ থেকে টাকা ও ব্যাগ নিয়ে আসি, বাসায় যেতেই আম্মা আমার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে নেয়। আমার ছোট বোন কান্না শুরু করে মজা খাওয়ার জন্য, বোনকে সঙ্গে দিয়ে আম্মা আমাকে দোকানে পাঠিয়ে দেয়। মজা কিনে বাসায় গিয়ে দেখি আম্মা দরজা বন্ধ করে আছে, আমি ডাকাডাকি করলেও দরজা না খোলায় আমি চিৎকার শুরু করি, তখন সবাই এসে দরজা ভাঙে, তখন আম্মা বমি করতে ছিল, পরে বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়। মজিবুর রহমান বলেন, সকালে আমি কৃষি কাজে চলে গিয়েছিলাম, কাজ থেকে বিকেলে বাড়িতে আসার পথে জানতে পারি, আমার স্ত্রী ও মেয়ে কেড়ির বড়ি খাইছে, এই খবর শুনে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সমিতি ও মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো ঋণ ছিল আমাদের পরিবারের, আমার দুই ছেলে বিদেশ রয়েছে, তারা তো টাকা পাঠাচ্ছে, তারপরও কেন আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে কেন মরতে হবে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুব আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রাত ১০টায় পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠানো হয়েছে।