বড় ভাই শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পৌরসভার আমুয়াকান্দা বাজারে গত ২০ জুলাই ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন সাইফুল ইসলাম (৩৫)। আন্দোলন সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না তাদের। সুমন ব্যাপারীর কাছে ধান বিক্রি করে ট্রলি থেকে বস্তা নামাচ্ছিলেন। এ সময় গুলির শব্দ শুনেন। লোকজনের ছুটাছুটি দেখে বড় ভাই শহিদুল ছোট ভাই সাইফুলকে নিয়ে পাশে সরে যাচ্ছিলেন। তাৎক্ষণিক একটি গুলি সাইফুল ইসলামের ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার পিছন দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু ঘটে। তার লাশ দেখে দাদা আফতাব উদ্দিন (৮০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিন দিন পর তিনিও মারা যান। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া ও পরিবারে আজও শোকের মাতম চলছে। নিহত সাইফুল ইসলাম উপজেলার রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের চক ঢাকিরকান্দা গ্রামের তৈয়ব আলীর পুত্র। কৃষিকাজ ও দিন মজুরি করে সংসার চালাতেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী রহিমা। তিনি জানান, নিজেও এতিম। তিন শিশু সন্তান রেখে গেছে আজ তারাও এতিম। আমার চলার রাস্তা নাই, যাওয়ার জায়গা নাই। সামনের দিনগুলি চলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সন্তানদের বাবা বলে ডাকার পিপাসাই কিভাবে মিটবে। ২ বছরের মেয়েটি বাবার খুবই আদরের ছিল। ঘটনার দিন মেয়ে তার বাবাকে যেতে দিচ্ছিল না। পরে আম কিনে আনবে বলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ শুধুই অন্ধকার। বড় ভাই শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা আন্দোলনের বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমাদের কাছে কোনো আন্দোলনও ছিল না। বাজার থেকে দেখলাম ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংষর্ষ চলছে। সেখান থেকে গুলি এসে আমার ভাইয়ের মাথায় বিদ্ধ হয়েছে। বিচার চেয়ে কি লাভ হবে। লাশ এনে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছি। বড় বোনজামাই মো. হাবিবুল্লাহ জানান, তাদের অল্প জমিতে বোর আবাদ ছাড়া অন্য কোনো ফসল হয় না। তাই বেশির ভাগ দিন মজুরি কাজ করে সংসার চালাত সাইফুল ইসলাম। তার মৃত্যুতে পরিবারটির চলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরপর দাদা নাতির মৃত্যুতে আমরা খুবই শোকাহত। ফুলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহবুবুর রহমান জানান, দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে সাইফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে থানায় এসে অভিযোগ করতে বলেছিলাম। এতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে।