কালীগঞ্জে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি নিরোধক নির্মাণের দাবি
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জ
আদরিয়ান আহমেদ আজমাইন কালিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়–য়া একজন শিক্ষার্থী। প্রতিদিনের ন্যায় ১১জুলাই- ২০২৪ আদরিয়ান স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরছিল। প্রাথমিক এ বিদ্যালয়টির সামনের হাসপাতাল সড়কে উঠতেই দ্রুত গতিতে একটি ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এসে তাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। তৎক্ষণাৎ রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে আদরিয়ান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানায়, তার বাম পায়ে হাড় ভাঙা জখম হয়েছে। এরপর থেকে আজ অব্দি পা ব্যান্ডেজ করে সে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আদরিয়ান ফররুখ আহমেদ ও তানিয়া সুলতানা দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান এবং ফয়লা গ্রামের বাসিন্দা। প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদরিয়ানের দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার ঘটনাটি একটি মাত্র ঘটনা নয়। প্রতিনিয়তই এই সড়কে দ্রুত গতিতে চলা যানবাহনের কারণে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। উপজেলার পূর্বঅঞ্চল থেকে কালিগঞ্জ শহরে প্রবেশের অন্যতম এ সড়কের পাশে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় কালিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ও রয়েছে। এ সড়কের সঙ্গে আরেকটি শাখা সড়ক প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে দিয়ে কোলার রোডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এই সংযোগ সড়কে গতিরোধক (স্পিড ব্রেকার) থাকলেও অন্য প্রান্তের হাসপাতাল সড়কটিতে নেই কোনো গতিরোধক। যে কারণে ব্যাটারি চালিত যানসহ সব ধরনের যান বিশেষ করে ইজি বাইকের বেপরোয়া গতির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া আসার সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় প্রায়ই। আবার স্কুল ভবনের দেয়াল ঘেষে রাস্তার উপর অবৈধভাবে বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করে রাখার কারণে খুদে শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক ব্যাবহার করে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এই হাসপাতাল সড়কটির আশপাশে সলিমুননিছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবু বক্কর বিশ্বাস মোকসেদ আলী আলিম মাদ্রাসা থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে একটিই। অর্থাৎ এই সড়কে প্রতিদিন অন্যান্যদের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীদের চলাচল রয়েছে। অথচ সড়কটি ব্যবহারকারী যানবাহনের ড্রাইভাররা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে শিক্ষার্থীসহ সড়ক ব্যাবহারকারীদের দুর্ঘটনার ঝুঁকির মধ্যে ফেললেও তা দেখার কেউ নেই। তাই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয়রা সব প্রকার দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে অতিসত্তর কালিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তেমাথার পশ্চিম এবং পূর্ব প্রান্তে দুইটি গতিরোধক (স্পিড ব্রেকার) দেয়ার দাবি জানায়। স্থানীয় বাসিন্দা রাজিব আহমেদ বলেন, হাসপাতাল সড়কে বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই তেমাথায় প্রতিনিয়তই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। আর এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটার অন্যতম কারণ হলো যানবাহনের দ্রুত গতি। আর এ সড়কে যানবাহনের দ্রুত গতি রোধ করা না গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে। এ কারণে আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষের দ্রুত সড়কটিতে গতিরোধক নির্মাণ করে দেয়া উচিত। কালিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতাল সড়কটি ব্যাবহার করে স্কুলে যাওয়া আসা করে। দুর্ঘটনায় এড়াতে সড়কটিতে দ্রুত স্পিড ব্রেকার নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। ইতিপূর্বে ব্যাপারটি আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে অবগত করলেও কোনো সুফল পায়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আমি দ্রুততার সঙ্গে সড়কটিতে গতিরোধক বা স্পিড ব্রেকার দেয়ার দাবি জানাই। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ব্যাপারটা আপনার কাছ থেকে জানলাম। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব কি করা যায়। কালিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, হাসপাতাল সড়কটি শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সড়কের সঙ্গেই বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সড়কে চলাচলকারী শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনার ব্যাপারে আমি অবগত নই। আমি খোঁজখবর নিয়ে ওই সড়কটি শিক্ষার্থীসহ সব জনগণের নিরাপদ চলাচলের জন্য যদি গতি নিরোধক নির্মাণের প্রয়োজন হয় তাহলে তা অবশ্যই করে দেবো।