ঝিনাইগাতীর হাটবাজারে চাঁই বিক্রির ধুম
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরএম সেলিম শাহী, ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি
ঝিনাইগাতীর হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ টাকার চাঁই বিক্রি হচ্ছে। মাছ ধরার সামগ্রী চাঁই কিনতে এখানে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও আশপাশের এলাকার মানুষজন আসেন। চাঁই তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর তা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়।
প্রকৃতিতে নেমেছে বর্ষা, খালবিলে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। সেই সুবাদেই শেরপুরের ঝিনাইগাতী হাটে এখন চাঁই বিক্রির ধুম। মাছ ধরার অন্যতম অনুষঙ্গ চাঁই বিক্রি করে বেজায় খুশি ঝিনাইগাতীর নারী-পুরুষ।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, শেরপুর ঝিনাইগাতীর লয়খা, শ্রীবরদী উপজেলার গোপাল খিলা গ্রামসহ অন্তত ১০টি গ্রামের প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা বছরব্যাপী চাঁই তৈরি করেন। কৃষকরা তাদের কৃষিকাজের ফাঁকে ফাঁকে তৈরি করেন চাঁই। আবার গৃহিণীরাও অবসরে চাঁই তৈরি করেন। এমনকি স্কুল শিক্ষার্থীরাও অবসরে অংশ নিয়ে থাকেন বিশেষ এ কাজে।
এসব চাঁই তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর বাজারে তা এখন খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আকার অনুসারে বিক্রির মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
মাছ ধরার উপকরণ চাঁই, বিভন্ন এলাকায় ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি, বুড়ং ও ভাইর নামে পরিচিত। এসব চাঁই তৈরি করে সারা বছর নিজ নিজ ঘরে মজুত রাখা হয়। তারপর অপেক্ষা শুধু বর্ষার। কারণ, বর্ষাকালেই বেশি চলে বেচাবিক্রি।
এরইমধ্যে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ। শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতে দেখা দিয়েছে বন্যা। তাই মাছ ধরার জন্য অনেকেই চাঁই কিনতে যাচ্ছেন স্থানীয় বাজারগুলোতে। বাজারেও এখন চাঁই বেচার ধুম পড়েছে। বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি এখানকার চাঁইয়ের গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আশানুরূপ দাম পাওয়ায় খুব খুশি চাঁইশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। গ্রামগুলোতে চাঁই তৈরি করে এখন অনেকেই স্বাবলম্বী। ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের লয়খা গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, ‘অন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে সারাবছরই চাঁই বানাই। আর ঘরে মজুত করে রাখি। বর্ষা শুরু হলে চাঁই বিক্রিও বেড়ে যায়। দাম পাওয়ায় লাভ হচ্ছে ভালো।’ তবে কারেন্ট জালের দাপটে এখন চাঁইয়ের চাহিদা আগের তুলনায় একটু কম। তা ছাড়া বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
গৃহিণী আকলিমা জানান, ‘বাড়ির সব কাজ শেষে চাঁই বানাই। আগে লাভ বেশি অইতো। এহন আগের মতো আর বাঁশ পাওয়া যায় না, বাঁশের দামও বেশি, তাই লাভ একটু কম অয়। তাও আমাগো চলে।’
সরকারের কাছে ঋণসুবিধা চেয়ে তিনি আরো বলেন, ‘সরকার যদি আমাগো কিছু ঋণ দিতো তাইলে আরো বালা অইতো। আমাগো সংসার আরো বালাভাবেই চালতো।’
এ গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশা ও সাবিনা বলে, ‘আগে আমাদের এলাকার মানুষ খুব অভাবী ছিল। টাকা পয়সার অভাবে লেখাপড়া করাইতে পারতো না। এখন আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি চাঁই তৈরি করে নিজেদের খরচ চালাই। পরিবারকেও সহায়তা করি।’ ঝিনাইগাতী বাজারের চাঁই বিক্রেতা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘বর্ষা শুরু হওয়ায় চাই বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। অনেকেই চাঁই কিনার জন্য আইতাছে। বর্তমানে আমাগো ভালোই লাভ অইতাছে।’ আরেক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, শুধু ঝিনাইগাতীর মানুষ না, অন্যান্য স্থান থেকেও মানুষ চাঁই কিনে নিয়ে যায়। চাঁই ক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁই দিয়ে মাছ ধরা খুব সহজ। তাই আমরা চাঁই কিনতাছি।’ ঝিনাইগাতী বাজারে ইজারাদার পক্ষের রাজস্ব (জমা) উত্তোলনকারী লিটন মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ টাকার মাছ ধরার চাঁই বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার মানুষ ছাড়াও আশপাশের এলাকার মানুষ এ হাটে এসব সামগ্রী কিনতে আসেন।’