দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়ায় বর্তমানে অবিক্রিত পাথরের স্তূপ ক্রমেই বাড়ছে। দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল মধ্যপাড়া পাথর খনি কর্তৃপক্ষের ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে পাথর উত্তোলন বাড়লেও পাথর বিক্রিতে কোনো গতি আসছে না।
খনি থেকে প্রতিদিন পাথর উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন হলেও বর্তমানে দৈনিক ৬ হাজারের অধিক পাথর উত্তোলন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। অথচ দৈনিক পাথর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার মেট্রিক টন। খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় গত জুন মাসে পাথর উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। আর জুন মাসে পাথর বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৭ হাজার মেট্রিক টন। খনির ৯টি ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের ৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন পাথর মজুত রয়েছে। এ অবস্থায় পাথর বিক্রির পরিমাণ না বাড়ায় কোম্পানিটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, খনি কর্তৃপক্ষের বাস্তবসম্মত বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় পাথর বিক্রিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিক্রয়নীতি বাজার উপযোগী না হওয়ায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
এর আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে খনি কর্তৃপক্ষের অদক্ষ বিপণন ব্যবস্থার কারণে পাথর খনির ৯টি ইয়ার্ডে প্রায় ৭ লাখ টন পাথর অবিক্রিত থাকার পর পাথর খনিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পাথর রাখার জায়গার অভাবে ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাথর উত্তোলন ও খনি উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নাশকতায় ইন্ধনদানের অভিযোগে মধ্যপাড়া পাথর খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ রফিজুল ইসলাম রিটুকে তার রংপুরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এঘটনায় খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ মুখ খুলছেন না। তবে, তাকে বাঁচাতে খনির একটি বিশেষ চক্র উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেপ্তার ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এর আগে খনির মালামাল ক্রয়ে ঠিকাদারী, পাথরের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। মধ্যপাড়া খনির পাথর বিক্রিতে ধস নামার বিষয়ে খনির উপ-মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. রাজীউন নবী বলেন, কোনো দিন ২ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর বিক্রি হয়। আবার কোনো দিন একেবারেই বিক্রি হয় না। এমনও দিন আসে, যেদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত পাথর বিক্রি হয়ে থাকে বলে তিনি দাবি করেন। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, পাথর বিক্রি না হওয়ার মূল কারণ হলো বিপণন ব্যবস্থায় ত্রুটি। এ কারণেই মধ্যপাড়ায় পাথর বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।