কুষ্টিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতি করে অন্যের জমি বেচা-কেনা ও দখল চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় জেলা আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এরই ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার ৩৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থাটির অতি বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তে ৪১ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন সরকারি কর্মচারী রয়েছে। তাদের বিষয়টি দুদকের সিডিউলভুক্ত। তাই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারি না। তবে আদালতকে অবহিত করেছি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান সুজন, জালিয়াতির ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া জাহানারা বেগম, আজেরা খাতুন, পিঞ্জিরা খাতুন ও আমির হোসেনের নাম রয়েছে। এর আগে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে আসে একটি জালিয়াত চক্রের খবর। যারা কুষ্টিয়ার মজমপুর মৌজার প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ২২ শতক জমির ভুয়া মালিক সেজে মাত্র ৭৭ লাখ টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে ওই জমির প্রকৃত মালিক শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমএম ওয়াদুদ ও তার শরিকরা। জালিয়াত চক্রটি পরিবারের সবার ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে রাতারাতি অন্যের জমির মালিক বনে যান।
এ ঘটনায় ৭ সেপ্টেম্বর এমএম ওয়াদুদ প্রতারক চক্রের ১৮ সদস্যের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজনসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই মামলায় উঠে আসে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রবিউল ইসলামের নাম। মামলার আসামি মহিবুল ইসলামের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সাবেক চেয়ারম্যানের এ সম্পৃক্ততা মেলে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির ঘটনায় নির্বাচন অফিসের পক্ষ থেকে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় কুষ্টিয়া মডেল ও কুমারখালী থানায় ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে পৃথক দুইটি মামলা করেন জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। দাখিলকৃত অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পর ১৫ সেপ্টেম্বর তদন্তভার গ্রহণ করে সিআইডি। এরপর কয়েকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি এবং ১৫ জন আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে ৪১ জনের অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন সরকারী কর্মচারী। তাদের অপরাধ দুদকের তদন্তের আওতাধীন থাকায় অভিযোগপত্রে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালতের গোচরীভুক্ত করা হয়েছে।
মামলার বাদী এমএম ওয়াদুদ বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। প্রায় চার বছর লেগে গেছে মামলার চার্জশিট দিতে। বিভিন্ন সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় চার্জশিট দিতে ডিলে হয়েছে। যেহেতু আমি চার্জশিটে কি বলা হয়েছে তা এখনো দেখিনি, তাই এখনি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অতি. বিশেষ পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই মামলায় হাজী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণিত হয়েছে এবং ওনার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দাখিল করেছি।
তবে এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম বলেন, ’আপনারা সাংবাদিকসহ জেলার সবাই জানেন- এ মামলার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। যেহেতু পুলিশ এ মামলায় চার্জশিট দিয়েছে, সেহেতু আমি আদালতে এর মোকাবিলা করব।