ঢাকা ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২৯৩ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ ধসে গেল পানিতে

আতঙ্কে উপকূলবাসী
২৯৩ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ ধসে গেল পানিতে

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার উপকূলবাসীর স্বপ্নের বেড়িবাঁধ নির্মাণের এক বছরের মাথায় সাগরে ধসে পড়েছে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। খানখানাবাদ ইউনিয়নের কদম রসুল এলাকায় নির্মিত বাঁধে ভাঙনের বিষয়টি নিয়ে ভুল নকশা ও নিম্নমানের ব্লককে দুষছেন স্থানীয়রা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, সাঙ্গু নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এই ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বাঁধে নিম্নমানের কাজ করায় ও নকশায় ত্রুটির কারণে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ধসে পড়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে লুটপাট করা হয়েছে। তা না হলে ২৯৩ কোটি টাকার বাঁধ এক বছর যেতে না যেতেই পানির স্রোতে তলিয়ে যেত না। সঠিক তদারকি না করায় এখন সব ব্লক খসে পড়ে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়া কদমরসুল এলাকায় বর্তমানে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। ৩ মাস আগে শুরু করা কাজ শেষ না হওয়াতে নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়ছে। অথচ ভাঙন শুরু হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ৩৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৭ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ার পর বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃ তিকরণ করার কথা রয়েছে। অন্য দিকে পানি উন্নয়নের বোর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, গত ২৭ মে একনেকের সভায় অনুমোদন করা প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের পর অচিরেই টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হবে। এতে বাঁশখালী অংশে প্রকল্পের জিও (সরকারি আদেশ) অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার (প্রথম পর্যায় প্রকল্প) আওতায় বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। এই সংস্কার কাজ উপজেলার খানখানাবাদ, ছনুয়া, বাহারছড়া ইউনিয়নে ৩টি প্যাকেজে একহাজার মিটারসহ সাধনপুর ইউনিয়নের পুরানো বেড়িবাঁধ শক্তিশালীকরণ, সাগরতীর ভাঙন রোধকরণ করা হবে। অন্যদিকে সাধনপুর ইউনিয়নের সাঙ্গু নদীর মোহনায় নদীর তীর ভাঙন রোধে কাজ করা হবে বলে জানা যায়। কদমরসুল এলাকার মোহাম্মদ শোয়াইব বলেন, ২নং ওয়ার্ড কদমরসুল এবং ১নং ওয়ার্ডের খানখানাবাদ এলাকায় প্রায় ১৩৫ চেইন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘুম হারাম হয়ে যায়, জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে এ শঙ্কায় থাকে জনগণ। সাগর পাড়ে বেড়াতে আসা স্থানীয় ইয়াকুব নবী ও আলী হোসেন বলেন, বছর বছর আমাদের দুঃখের শেষ হয় না।

ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেই এলাকার জনগণ নির্ঘুম সময় পার করে, অথচ বার বার বরাদ্দ হয় এ কদমরসুল এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে। তাতে কিছু লোকের পকেট ভারী হয়, বাস্তবে কাজ হয় না। স্থানীয়রা জানায়, এর আগে খানখানাবাদের কদমরসুল এলাকায় বর্তমানে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ করেনি। বিগত ৩ মাস আসে শুরু হওয়া কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। অথচ ভাঙন শুরু হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরেজমিনে গেলে খানখানাবাদ ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ভাঙন এলাকায় ৩২ হাজার জিখব্যাগ ফেলার জন্য সরকার দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদার ৬ হাজার জিওব্যাগ ফেলে কাজ বন্ধ করে রেখেছে, তারা কাজ করছে তাদের ইচ্ছে মতো, এখানে দেখার যেনো কেউ নেই, এসব দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত পাউবোর কর্মকর্তারা থাকেন শহরে। আমাদের লোকজন সাগরে ভেসে গেলেও যেন তাদের কিছু করার নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, খানখানাবাদ এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কারে যে কাজ চলমান রয়েছে তা এখনো শেষ হয়নি। জরুরি কাজের অংশ হিসেবে ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলার জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার এখন কাজ চলমান রেখেছে। যতটুকু কাজ করবে ততটুকু বিল প্রদান করা হবে। অন্যদিকে গত ২৭ মে একনেকের সভায় অনুমোদন করা প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের পর অচিরেই টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হবে। এতে বাঁশখালী অংশে প্রকল্পের জিও (সরকারি আদেশ) অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার (প্রথম পর্যায় প্রকল্প) আওতায় বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৫৫ কোটি টাকা। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলে খুব শিগগিরই এই কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম -১৬ বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মুজিবুর রহমান সিআইপি বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দ্রুত যাতে কাজ শুরু হয় সেজন্য পানি বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এরই মধ্যে জিও অনুমোদন হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করার পরপরই শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরুর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে যাতে কোনো অনিয়ম সর্য্য করা হবে না তা আমি স্পষ্ট ভাবে বলেদিয়েছি।

পূর্বে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে যে দুঃখ কষ্ট মানুষ পাচ্ছে এরকম কোনো অনিয়ম যেন এ প্রকল্পে না হয় তা সুষ্পষ্টভাবে সংশ্লিষ্টদের বলেছি। আশা করি সুন্দরভাবে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হবে। এটি নির্মিত হলে পশ্চিম বাঁশখালী পর্যটনের বিকাশ ঘটবে এবং উপকূলবাসীর আতঙ্ক কেটে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত