অসহযোগ আন্দোলন
সারাদেশে সংঘর্ষ-সহিংসতা
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক সহিংসতা ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণীর পাশাপাশি গাড়ি ও স্থাপনায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে শিথিল হওয়া কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকার তিন দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।
মুন্সীগঞ্জ : সারা দেশে সহিংসতা ও সংঘর্ষের মধ্যে মুন্সীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে দুইজন নিহত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবু হেনা জামাল জানান, গুলিবিদ্ধ দুই যুবকের লাশ হাসপাতালে আনা হয়। তাদের বয়স ২১ থেকে ২৫ বছর। গতকাল থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। আহতরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জানা যায়, ছাত্রহত্যার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন আন্দোলনকারীরা। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে একই চত্বরে অবস্থান নেন দলীয় কর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে কৃষি ব্যাংক চত্বর থেকে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা মিছিল বের করলে ধাওয়া দেন দলীয় কর্মীরা। পরে শিক্ষার্থীরা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে শুরু হয় সংঘাত। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটলে কৃষি ব্যাংক চত্বরসহ সুপারমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিত। বিক্ষোভকালে সড়কে টায়ার ও আগুন জ্বালায়। শহরে থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে দোকান পাট বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় দেড় সহস্রাধিক লোক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অস্ত্র-গুলি লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় এরশাদ আলী নামে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে। এছাড়া জেলার দেবীদ্বার পৌর এলাকায় আবদুর রাজ্জাক রুবেল নামে এক বাস চালককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দিনভর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও গুলিতে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একটি সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম জানান, সকাল থেকে থানার সব পুলিশ ফোর্স মহাসড়কে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ এক-দেড় হাজার দুর্বৃত্ত থানায় ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় তাদের বাধা দিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কনস্টেবল এরশাদ আলীকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ওসির কক্ষে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং ওসিকে পিটিয়ে জখম করে সন্ত্রাসীরা। তারা ইচ্ছামতো তাণ্ডব চালিয়ে চলে যায়। এ সময় থানার অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়। পুলিশের ব্যবহৃত মালামাল লুট করা হয় এবং কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। নিহত কনস্টেবল এরশাদের বাড়ি শেরপুর জেলায়। হাইওয়ে পুলিশ সুপার আরো জানান, লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলির হিসাব করা হচ্ছে। আমরা জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে জেলার অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন। এছাড়া জেলার দেবীদ্বারে আবদুর রাজ্জাক রুবেল নামে এক বাস চালককে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবীদ্বার পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি দেবীদ্বার পৌরসভার বাড়েরা এলাকার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। দেবীদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া বলেন, রুবেল বিএনপির কর্মী ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি মিছিলে এসে হামলার শিকার হয়ে নিহত হন। হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস ও থানার সামনে একটি প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়। এদিকে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
ফেনী : ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে কয়েকজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। ফেনী ২৫০ শয্যা জেলারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জুড়ী থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছে। ছাত্রলীগ ধাওয়া দেয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করেছি।
ঝালকাঠি : ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপে মধ্য দিয়ে ঝালকাঠিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচি চালানো হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়। গতকাল সকাল ১০টায় শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়। সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে এসে অবস্থান করে। এর পরে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা অবস্থান করে। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিতে দেখা য়ায়।
দিনাজপুর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা দিনাজপুরে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি’র পৈত্রিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি’র বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দিনাজপুর শহরের হাসপাতাল রোডস্থ আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির পৈত্রিক বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর করে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপুণ করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ হাসপাতাল মোড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য শতাধিক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। পুলিশের সাজোয়া যান ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
জানা যায়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অর্ধ শতাধিক বিক্ষোভকারী ও পথচারী আহত হয়েছেন। ১০ জন পুলিশ ইট-পাটকেলের হামলায় আহত হয়েছেন। একই সময় ফুলবাড়ী উপজেলা সদরের নিমতলায় সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি’র বাস ভবনে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে বহুতল ভবনের সামনের কাচ ভাঙচুর করে।
ভোলা : ভোলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যলয় আগুন দেয়া হয়। এছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ভোলা পৌরসভা, কৃষক লীগের অফিস, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ও ডিসি অফিসের বেশ কিছু গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জেলা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহতদের ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোনলকারীরা এখন টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট অঙ্কুর রয়ে’র মোটরসাইকেলসহ প্রায় ৫০টি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আন্দেলনকরীরা জেলা প্রাশাসকের কার্যালয়ে হামলা চালায় এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
সাতক্ষীরা : এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনে সাতক্ষীরায় যুবলীগের ব্যানার ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করে ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে কাদা ছুড়ে প্রতিবাদ করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। খুলনা শহরের মোড় থেকে মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নিউমার্কেট এলাকায় যুবলীগের ব্যানার টেনে ছিঁড়ে ফেলে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে খুলনা রোডের মোড়ে বঙ্গন্ধুর ম্যুরালে কাদা ছোড়া হয়। আন্দোলনে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠণের নেতা কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব শহরে মোতায়েন করা হয়।
কালিয়াকৈর : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল রোববার দিনব্যাপী সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায় পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হামলায় ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের গুলিতে শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। থমথমে বিরাজ করছে কালিয়াকৈর।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী রোববার সকাল থেকেই কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর বাজার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও স্থানীয় আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে সরকারিবিরোধী নানা স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল করে। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে ওই মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীদের মারধর করে। কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের অফিস, হাইওয়ে, জেলাসহ ৩টি পুলিশ বক্স আগুন দেয়। এ সময় তারা বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। শিক্ষার্থীরা থানা থেকে চন্দ্রার দিকে কিছু দূরে পৌঁছলে অপরদিক থেকে প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ডগ্রানেট, রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এতে প্রায় ৭ বছরের শিশুসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
নীলফামারী : পূর্ব ঘোষিত বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি পালনের সময় আওয়ামী লীগ সমর্থক ও আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, পোস্ট অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল রোববার সকালে অসহযোগ কর্মসূচি পালনের প্রাক্কালে বৈষম্যে নেতাকর্মীরা শহীদ মিনার, স্বাধীনতা স্মৃতি অম্লান চত্বরে অবস্থান কালে অপরদিক থেকে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ঢিল ছোড়াছুড়ি কালে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এবং পোস্ট অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারস্যাল ও সাউন্ডগ্রেনেড ছোড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবুও ধাওয়া পাল্টা চলতে থাকে অবশেষে রাবার বুলেট ছুড়লে কিছুটা শান্ত হয়। এ সময় রাবার বুলেটের আঘাতে পথচারীসহ ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আধুনিক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় রাজপথ থেকে সরকার দলীয় কর্মীরা বিতাড়িত হয়ে সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর এর বাসভবনের সামনে সমবেত হয়। দুপুর ২টার দিকে আসাদুজ্জামান নূর এমপির বাসভবনে দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর করে ৯টা মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা পৌর এলাকার বাটার মোড়ে নাগরিক হাসপাতাল ও বিএনপি সভাপতি আলমগীর সরকারের দোকান ভাঙচুর চালায়।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে একদফা দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে নগরজালফৈ এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী এবং বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে কাজী নজরুল স্মরণি সড়ক অবরোধ করে দিনের কর্মসূচি শুরু করে তারা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং অভিভাবক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেয়। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতার ঢল নামে। অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। জমায়েতস্থলে হঠাৎ খবর আসে শহরের বটতলায় দুই ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে জমায়েতের লোকজন শহরের বটতলার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা বটতলাস্থ বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়। সেখানে রাখা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) ব্যক্তিগত গাড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা সদর রোড হয়ে সিঅ্যান্ডবি রোড দিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে কয়েকজন আহত হয়। এতে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি জঙ্গি আকার ধারণ করে। পরে জঙ্গি মিছিলটি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে থানাপাড়া রোডের দিকে যায়।
বিক্ষোভকারীরা থানাপাড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরের চারতলা ভবনে হামলা চালিয়ে প্রথমে ব্যাপক ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ফায়ারসার্ভিসে ফোন করা হলেও তারা আসতে পারেনি। পরে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের দিকে চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় বাসস্ট্যান্ড হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় আবারও অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা গুলি চালায়। এতেও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ ১৩ আন্দোলনকারীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন জানান, একটি বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্বরের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ ২-৩টি টিয়ারশেল ছুড়ে মিছিলটি ফিরিয়ে দেয়। অন্য কোথাও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। আন্দোলনকারীরা নির্বিঘ্নে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী শহরে টহল দেয়।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো উপজেলা শহর। আন্দোলনে আয়োজনে সুন্দরগঞ্জ পৌরশহরের বাহিরগোলা মসজিদ মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বাহিরগোলা মসজিদ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা সুন্দরগঞ্জসহ সারা দেশে সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি করেন। সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করলে তাদের বাধা দেয়া হবে না। জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
শেরপুর (বগুড়া) : বগুড়ার শেরপুরে পুলিশ বক্সে আগুন ও থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টাকালে সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ছাত্রজনতা আহত হয়েছেন। এরমধ্যেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ৩০ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডস্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ কর্মসূচির প্রথমদিনে রোববার সকাল ১০টার দিকে শহরের তিনদিন থেকে ছাত্র-জনতার ব্যানারে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলগুলো শহরের ধুনটমোড় এলাকায় একত্রিত হয়ে অন্তত হাজার হাজার মানুষ পুলিশকে ধাওয়া দেন। এ সময় পুলিশ পিছু হটলে সেখানে স্থাপিত পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন তারা। পরে শহরের বাসস্ট্যান্ডস্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর থানা ঘেরাও ও হামলার চেষ্টা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। কিছু সময় পরেই আবারো সংগঠিত হয়ে থানায় হামলার চেষ্টা চালান তারা। এভাবে কয়েকদফা ঘেরাও ও হামলার চেষ্টা চালালেও পুলিশ তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, ধুনটমোড় পুলিশ বক্সে আগুন দেয়ার পর থানায় হামলার চেষ্টা চালায় আন্দোলনকারীরা। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাকা গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। তবে কী-পরিমান টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে- তা প্রাথমিকভাবে জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
তিতাস (কুমিল্লা) : কুমিল্লার তিতাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলটি বেলা সাড়ে ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেট থেকে শুরু করে গৌরীপুর-হোমনা সড়ক প্রদক্ষিণ করে কড়িকান্দি বাজারের আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। অপরদিকে বেলা ১১টায় বাতাকান্দি বাজারের গৌরীপুর-হোমনা সড়কের উত্তরপ্রান্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং দক্ষিণ দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা অবস্থায় নেই। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আধাঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাস্তা ছেড়ে দিলে আন্দোলনকারীরা দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সড়কটি দখল করে রাখে। এসময় তারা বাতাকান্দি বাজারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে এবং স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহিমের মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়।
চাঁদপুর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান অসহযোগ আন্দোলনে চাঁদপুরে ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সংঘর্ষে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয় পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আশেকে রাসুল যাওয়াদ ও সদস্য আরাফাত সানি। শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হরে এবং এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এদিকে ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুরাতন বাবস্ট্যান্ড থেকে সরে গিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের সড়ক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের প্রেসক্লাব পয়েন্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আন্দোলনকারীদের প্রায় ১১ জন সদস্য আহত হয়েছে। হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও পরবর্তী আবার সেই জায়গায় একত্রিত হয়ে তাদের দাবি আদায়ের প্রতি বিভিন্ন স্লোগান প্রদান করেন। পুলিশের অনুরোধ আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়ে পুলিশের উপর ইট-পাক্ষেল নিক্ষেপ শুরু করে। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের একদিকে তাড়িয়ে দিলে অন্যদিকে আবার তারা একই পয়েন্টে অবস্থান নেয় এবং বিভিন্ন স্লোগান প্রদান করে এবং রাস্তায় আগুন জালিয়ে বিক্ষোভ করে।
কুষ্টিয়া : অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে বৈষম্যবিরোধীরা কুষ্টিয়া শহরের সাদ্দাম মোড় থেকে ছোট ছোট আকারে মিছিল সহকারে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ মহাসড়ক দিয়ে চৌড়হাস মোড়ে এসে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শহরের এন এস রোডে ঢোকার সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের উপরও হামলা ক্যামেরা ভাঙচুরসহ পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বঙ্গবন্ধু ম্যূরাল ভাঙচুর, জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগসহ শহরের প্রধান সড়ক দখল করে নেয় তারা। পুলিশ তাদের ছত্র ভঙ্গ করতে রাবার বুলেটসহ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কুষ্টিয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। তবে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বৈষম্যবিরোধীদের মজমপুর গেটে সমাবেশ করার কথা থাকলেও কিছুলোক লাঠিসোঁটা ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করলে পুলিশ সরে যায়। এ সময় পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বঙ্গবন্ধু ম্যূরাল ভাঙচুর, জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগসহ শহরের প্রধান সড়ক দখল করে নেয় তারা। এ সময় জেলা প্রশাসন ভবনের মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে পুলিশ বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া পাহারায় থাকতে দেখা যায়।
নওগাঁ : নওগাঁর রাণীনগরে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রাণীনগরে শের-এ-বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয়ের কাছে সমবেত হয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলার বিজয়ের মোড়, বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল, বাজার মোড় হয়ে পুনরায় বিজয়ের মোড়ে অবস্থান নেয়। এসময় তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। এতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে থাকা নেতাকর্মীদের ১২টি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শান্তি মোড় থেকে একটি মিছিল বের করে আন্দোলনকারীরা। শহরের বড় ইন্দারা মোড় হয়ে নিউমার্কেটে দিকে আসার পথে নবাবগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছন দিক থেকে মিছিলে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাদের ধাওয়া করে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে, পাশে থাকা ১২টি মোটরসাইকেল আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এরপর পাশে থাকা মোটরসাইকেল আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে ১২টি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে। এদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের মিছিল ও বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। সংহতি প্রকাশ করে মিছিলে যোগদেন আইনজীবীরাও। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মহানন্দা সেতুর টোলঘর এলাকা অবরোধ করে স্লোগান দেয়। আন্দোলনকারীরা স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল করে রাখে পুরো শহর।
যশোর: যশোরের রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলে। গতকাল রোববার সকাল থেকে মিছিলের শহরে পরিণত হয় যশোর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দেশব্যাপী চলা অসহযোগ আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে যশোর। এই অসহযোগ আন্দোলনকে সর্বাত্মক রূপ দিতে যশোর শহরের সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল প্রকারের স্বল্প ও দূরপাল্লার যানবাহনের চলাচল বন্ধ ছিল। যশোরের ২২টি রুটে চলাচল করেনি কোনো যাত্রীবাহী বাস। টার্মিনাল ছাড়েনি কোনো ট্রাক ও ট্যাঙ্কলরী। ফুয়েল পাম্পগুলো বন্ধ করে কর্মচারীরা ছাত্র আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে। সকালে কাঁচা বাজার খুললেও বেলা ১২টা থেকে সব কিছু বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। শুধু ফামের্সী ও খাবার হোটেল ছাড়া যশোর শহরের সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা। এই আন্দোলন বেগবান করতে সকাল ১১টায় শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে মনিহার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পূর্ব ঘোষিত এই অসহযোগ আন্দোলনের বিক্ষোভ-সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন দিক থেকে হাজার হাজার ছাত্র জনতা চাঁচড়া মোড়ে জড়ো হতে থাকে।