সারা দেশে যখন অস্থিরতা চলছে, ঠিক সে সময় অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে এলাবাসীর কাছে গণধোলাই খেয়েছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন। এমন ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার বিকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোলানী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহকারী-কাম-হিসাব সহকারী, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও আয়া পদে সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের শেষ তারিখ ছিল চলতি বছরের গত ২৪ জুলাই। পদগুলোর বিপরীতে আবেদন করেন ৬৮ জন চাকরিপ্রত্যাশী এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩৪ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নিয়োগের নিমিত্তে প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি’র (এসএমসি) সভাপতি প্রার্থীদের কাছ থেকে এক কোটির অধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। ৬টি পদের মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে এক পরীক্ষার্থী অসৎ উপায় অবলম্বন (নকল) করার অপরাধে পরীক্ষাটি স্থগিত করে। নিয়োগ কমিটির সভাপতিকে নিয়োগ সক্রান্ত রেজুলেশন না শুনিয়ে (পড়িয়ে) ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এ সময় সভাপতি অস্বীকৃতি জানালে প্রধান শিক্ষক অশোভনীয় আচরণ করে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, নিয়োগ কমিটির সভাপতি আনসারুল হককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার হোসেন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে ফাঁকা রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু নিয়োগ কমিটির সভাপতি ফাঁকা রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়াও গত ২ আগস্ট শুক্রবার (নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন) রাতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়োগ কমিটির সভাপতির সাথে স্থানীয় কয়েকজনের সাথে বাকবিতন্ডা হয় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সরকারি বিধি মোতাবেক ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইসাহাক আলীর নিকট আত্মীয় চাকরিপ্রত্যাশী হওয়ায় স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আনসারুল হককে নিয়োগ কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়। অপরদিকে বর্তমান স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইসাহাক আলীকে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। যার বৈধতা চ্যালেন্স করে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যাহার মামলা নং-৪৯/২০২৪। মোলানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আক্তার হোসেন বলেন একটি পদে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। যারা নির্বাচিত হতে পারে নাই, তারা সংঘটিত হয়ে হামলা চালিয়েছে। প্রশ্ন কারা করেছে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন আমরা। স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রশ্ন কে করেছে মাধ্যমিক স্যার। নিয়োগ কমিটির সভাপতি আনসারুল হক বলেন, প্রধান শিক্ষক জোর করে আমার কাছে রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নেয়। গতকালকে এবং আজকে সকালে প্রধান শিক্ষক আমার কাছে ফাঁকা রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর চায়, আমি দেইনি। আজকে রেজুলেশনের বিষয়গুলো জানতে চাইলে আমার সঙ্গে অশোভনীয় আচরণ করে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা চেষ্টা করে। বোর্ডের সভাপতির সভাপতির সঙ্গে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল। যে কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে। প্রধান শিক্ষককের কথার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল। উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে সারাবাংলায় ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সভাপতির বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।