ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে বালুখেকো সেলিমসহ নিহত ছয়

চাঁদপুরে বালুখেকো সেলিমসহ নিহত ছয়

চাঁদপুরে চেয়ারম্যান সেলিম খান, তার ছেলে বাংলা চলচিত্রের নায়ক শান্ত খান, পুলিশসহ জেলায় সহিংসতায় গনপিটুনিতে ও গুলি বৃদ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাংলা চলচিত্রে টঙ্গী পাড়ার মিয়া ভাই, আমি নেতা হবোসহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন শান্ত খান। এসব ঘটনাটি ঘটেছে, গত সোমবার বিকালে ও সন্ধ্যায় জেলার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায়। চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত চেয়ারম্যান এবং বালু খেকো সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান গনপিটুনিতে নিহত হয়েছে। গত সোমবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরে নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে জনরোসে পড়ে। সেখানে নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে উদ্ধার হয়ে আসতে পারলেও পাশবর্তী বাগড়া বাজারে এসে জনতার মুখোমুখি হয়। সেখানেই জনতার পিটুনিতে নিহত হয় সেলিম খান ও তার ছেলে শান্ত খান। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেলিম খান চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়। এসব ঘটনায় সে জেলখাটে, দুদকে তার ও ছেলের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুহসীন আলম বলেন, তাদের মৃত্যুর বিষয় আমরা জেনেছি। তবে আমাদেরকে কেউ খবর দেয়নি। আমাদের জানমালের নিরাপত্তার কারণে সেখানে যাইনি। এদিকে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে যখন উল্লাসে নামে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। এই সময়ে কচুয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদ কচুয়া ডিগ্রী কলেজের সামনে গণপিটুনিতে ও ফরিদগঞ্জে বিক্ষুব্ধরা থানায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত (২০) নামে এক ছাত্রনেতা নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, বিকালে একটি বিক্ষোভ মিছিল থানায় প্রবেশের চেষ্টাকালে গেট ভেঙে ফেললে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। এতে শাহাদাত ও এমরান হোসেন (৩৮) নামে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।

এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহতদের দ্রুত ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত চাঁদপুর রেফার করলে পথেই শাহাদাতের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় আরো কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় পুলিশের এক কনস্টেবল মো. রেজাউল করিমও ইটের আঘাতে প্রাণ হারান। এই ঘটনার পর রাতে ফরিদগঞ্জ থানায় কোনো পুলিশকে দেখা যায়নি। এ ঘটনা সম্পর্কে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ জীবন বাঁচাতে গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ইটের আঘাতে একজন কনস্টেবল প্রাণ হারান। অন্যদিকে, হাজীগঞ্জ উপজেলায়, গত সোমবার দুপুরে সংঘর্ষের সময় দুর্বৃত্তদের ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছিল আজাদ সরকার। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্দরা টোরাগড় এলাকার আওয়ামী সমর্থিত কাজী বাড়ির সামনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। দুর্বৃত্তরা হাজীগঞ্জ পৌরসভার গেইট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পৌর মেয়রের গাড়ি, বিদ্যুত মেরামতের ডিজিটালাইজড পিকআপসহ ৩টি গাড়িতে আগুন ধরি দেয়। এছাড়াও পৌরসভা ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় পৌরসভার ভেতরে থাকা ৬টি মোটরসাইকেল ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থাকা ২টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব-উল আলম লিপন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপস শীল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ কুমার দেসহ আমরা টোরাগড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে ছিলাম। আমাদের অনেক পুলিশ আহত হয়েছে।

অন্যদিকে, দুপুরের পর থেকে উল্লসিত জনতা চাঁদপুর শহরসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। তারা সেনাবাহিনীর গাড়ি বহরের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আনন্দ প্রকাশ করেন। নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে নারী ও শিশুরাও সড়কে নেমে পড়ে। বিকালে বিক্ষুব্ধ জনতা চাঁদপুর শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হাসিনা সরকারের কাউকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। রাতে ও গতকাল মঙ্গলবার দিনভর চাঁদপুরে সেনা সদস্যরা সড়কগুলোতে টহল দিতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত