বাংলাদেশের প্রথম ‘স্মার্ট ভিলেজ’ ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হিজলী গ্রাম এখন ‘ভাঙা হাট’। ঢাক ঢোল পিটিয়ে গ্রামটি দেশের প্রথম ‘স্মার্ট ভিলেজ’ বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে সেখানে কিছু সাইনবোর্ড ও হস্তশিল্প ছাড়া আর এখন কিছুই নেই। স্মার্ট ভিলেজ গড়ার উদ্যোক্তা ঝিনাইদহের সাবেক জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা সম্প্রতি বদলি হওয়ার পরই ‘স্মার্ট ভিলেজ’ হিজলী গ্রামটি ভাঙা হাটে পরিণত হয় বলে গ্রামবাসি অভিযোগ করেন। ফলে স্মার্ট ভিলেজ গড়া নিয়ে এই জমকালো প্রচারণায় গ্রামের মানুষ প্রথমে আশায় বুক বাঁধলেও এখন তারা খুবই ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত।
সরজমিন ঐ গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২২ সালে হরিণাকুন্ডু উপজেলা কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের হিজলী গ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট ভিলেজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
ঝিনাইদহের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ২০২৩ সালে তারা বদলি হওয়ার পর এই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। স্মার্ট ভিলেজ করতে তারা হিজলী গ্রামে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। কিন্তু এখন সেখানে সাইনবোর্ড, দেয়াল লিখন ও হস্তশিল্প ছাড়া কিছুই নেই। হিজলী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইব্রাহীম বিশ্বাস জানান, আমাদের স্মার্ট প্রকল্প এখন বাইরে চলে যাচ্ছে। তারপরও এখনো আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হিজলী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্মার্ট বৈঠকখানাটি খোলা হয় না। বন্ধ রয়েছে লাইব্রেরি ও যুবক্লাব। নারীদের দক্ষতা বাড়ানো এবং অফলাইন-অনলাইনে বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ করার উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। গ্রামে শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ করার উদ্যোগ কার্যত মাঠে মারা গেছে। কৃষি কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা আগে হিজলী গ্রামে নিয়মিত এলেও এখন তাদের টিকিটাও দেখা মেলে না। গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঝরে পড়া, অটিষ্টিক এবং এতিম বাচ্চাসহ সব শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ থেমে গেছে। সরজমিন দেখা গেছে, স্মার্ট ভিলেজ হিজলী গ্রামে ঢোকার প্রবেশ পথে রাস্তার দু’ধারে বংশ বিস্তার করেছে ক্ষতিকারক পার্থেনিয়াম আগাছা। সেগুলো নির্মূলের কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রামের রাস্তাগুলোর জীর্নদশা। একটি সোলার লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামে হানাহানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হিজলী গ্রামের তুহিন, শহিদুল, সেলিম, ইমারুল ও ইসা জোয়ারদারের বরজের পান চুরি হয়েছে। রেজাউল নামে এক কৃষকের গরু চুরি হয়েছে। অথচ সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে গ্রামটি অপরাধমুক্ত। স্মার্ট ভিলেজ নিয়ে কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফৎ উদ দৌলা ঝন্টু বলেন, গ্রামের মানুষের আন্তরিকার অভাব রয়েছে। সে কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। হরিণাকুন্ডু উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি আবারো সরকারের বিভিন্ন উইং কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় কিনা চেষ্টা করবেন।