কেশবপুরে মধুশিক্ষা নিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়

শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় শিক্ষাক্রম ব্যাহত

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী মধুশিক্ষা নিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তবে শিক্ষার্থীদের তুলনায় বিদ্যালয়টিতে নেই অর্ধেকও শ্রেণীকক্ষ। দীর্ঘ ৪৫ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ে অহরহ শিক্ষার্থী আহত হচ্ছে। অন্যদিকে, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় অফিস রুম, শ্রেণীকক্ষসহ কমনরুমে পানি থৈ থৈ করে। এ প্রতিষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ট্রেনিং হয়। এসময় আগমন ঘটে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। তাদের বসার পর্যাপ্ত চেয়ার, মানসম্মত টয়লেটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। ফলে নানাবিধ সমস্যায় দিনকে দিন বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেশবপুর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পাবলিক ময়দানের পূর্বপাশে ১৯৭৬ সালে মধুশিক্ষা নিকেতন নামে কেজি স্কুল গড়ে ওঠে। ১৯৮১ সালে এর মূলভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত জিএম এরশাদের সদিচ্ছায় ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিতে কেজি স্কুল বাদ দিয়ে এর নামকরণ করা হয় কেশবপুর মধুশিক্ষা নিকেতন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০১০ সালে মূল ভবনের দোতলায় সরকারিভাবে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দিনকে দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষকদের অর্থায়নে ভবনের ৩য় তলায় আধাপাকা আরও একটি টিনসেড ভবন নির্মাণ করা হলেও শ্রেণীকক্ষ সংকটের নিরসন হয়নি। বর্তমান বিদ্যালয়টিতে ১৬টি শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন থাকলেও রয়েছে মাত্র ৮টি। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ একটি কক্ষে শিক্ষকেরা দাপ্তরিক কাজ করেন। অন্য ৮টি কক্ষে ষষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত ক ও খ শাখার প্রায় ৪‘শ শিক্ষার্থীসহ ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমশিম খেতে হয়। উপরের টিনসেড ভবনের টিন কয়েকবার ঝড়ে উড়ে যাওয়ায় বর্তমান তা ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এরপর থেকে ভবনের আশায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও ফল হয়নি।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শামস তাসরিফ খান, আশরাফী ওয়ারিদ জানায়, কক্ষ সংকটে তাদের শ্রেণীকক্ষে প্রতি বেঞ্চে চারজনকে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হয়। ফলে তাদের পড়াশোনা ও শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনযোগের বিঘ্ন ঘটে। নিচতলার ভবনের ওয়াল সবসময় ভিজে থাকে। পলেস্তরা খসে খসে পড়ে প্রায় সময় তারা আহত হয়। তাদের বাইসাইকেল রাখার কোনো জায়গা নেই। এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অলিয়ার রহমান, জিএম শাহিন জানান, বিদ্যালয়ের মূলভবন জরাজীর্ণ হয়ে বর্তমান তা ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ভবনের ভিত নিচু হওয়ায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। বর্ষার পানি অফিস রুম, মেয়েদের কমন রুমসহ নিচতলার শ্রেণীকক্ষে ঢুকে পড়ে। এরফলে ভবনের দেয়াল সবসময় ভিজে থাকায় শ্রেণীকক্ষে স্যাঁৎস্যেঁতে পরিবেশ বিরাজ করায় শিক্ষাক্রম ব্যাহত হয়। এতে প্রায় সময় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তীব্র কক্ষ সংকটে ধর্মীয় ক্লাস করতে সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয়। এত সমস্যার পরও শিক্ষাক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলার মধ্যে ২য় সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী তার বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে হওয়ায় সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন ট্রেনিং, মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলাম ট্রেনিংসহ সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা এ প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তৎকালীন সময়ের সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসারগণ স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন। সরকারের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নিয়ে সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে। জরাজীর্ণ জানালা, মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে জানালার গ্রীল, দরজা। বিদ্যালয়টিতে কম্পিউটার রুম, লাইব্রেরী, মানসম্মত ওয়াসরুম ও ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক কোনো কমনরুম নেই। যা আছে তাও অর্থাভাবে মেরামত সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কথা শুনে ৩০ জুলাই সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম তার স্কুল পরিদর্শনে আসেন। এসময় তাকে প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কথা জানানো হয়। তিনি নতুন ভবন পাবার ব্যাপারে শিক্ষকদের আশ্বস্থ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম জিল্লুর রশিদ বলেন, কেশবপুর সরকারি স্কুলে ভর্তির পর অবশিষ্ট শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় বলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী। বিদ্যালয়টির বর্তমান লেখাপড়ার মান ভালো। সে কারণে একটি বহুতল বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন খুবই প্রয়োজন।