ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মোরেলগঞ্জে ১২ বসতঘরে আগুন মৎস্য ঘের দখল

মোরেলগঞ্জে ১২ বসতঘরে আগুন মৎস্য ঘের দখল

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মুখে ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর গত ৫ আগস্ট থেকেই উপজেলার সর্বত্র মারপিট, ভাঙচুর, লুট, চুরি, দখল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে চলছে। ইতোমধ্যে মোরেলগঞ্জে কমপক্ষে ১২টি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুর, লুট, বহু দোকান বন্ধ করে দেয়া ও মৎস্য ঘের দখলের ঘটনা ঘটেছে। থানা পুলিশ নির্লিপ্ত থাকায় অবাধে চলছে এসব তাণ্ডব। বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, শতাধিক ঘের দখল, পঞ্চকরণ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভাঙচুর, শতাধিক পরিবারের লোকজন বাড়ি শূন্য হয়ে পড়েছে। রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া গ্রামে গত মঙ্গলবার রার্তে ইউপি সদস্য শ্রমীক লীগ নেতা বাহার ফকির, আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর ফকির, হারুন ফকির, এসকেন্দার ফকির গ্রাম পুলিশ মোস্তফা খানসহ ৫ বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বিভিন্ন মালামাল লুট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত বুধবার রাতে মধ্য বরিশাল গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা জামান, মজিবুল বয়াতী ও পূর্ব চিপাবারইখালী গ্রামে একটি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। একই রাতে কেসি চালিতাবুনিয়া গ্রামের ফারুক হাওলাদারের বসতঘর ভাঙচুর শেষে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ফাসিয়াতলা গ্রামের নুরুজ্জামান আকন, মনির আকন, বড়পরি গ্রামের ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম, কাটাবুনিয়া গ্রামের বাহার ফকির, মুনসুর ফকির, হারুন ফকির, এসকেন্দার ফকির ও গ্রাম পুলিশ মোস্তফা খানের বসতবাড়ির মালামাল লুট করে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পুলিশ মোস্তফা খানের স্ত্রী মিনা বেগম ও ইউপি মেম্বার বাহার ফকির বলেন, রাত ১১টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি বাহিনী একযোগে ৪টি ঘরের মালামাল লুট করে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা ৩টি গরু, ৫০ টি হাস ও ঘরের যাবতীয় মামলামাল ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। মোরেলগঞ্জে বাসস্টান্ড সংলগ্ন ব্যবসায়ী মো. তাজুল ইসলাম এর ক্রয়কৃত জমি গত ৮ আগষ্ট গভীর রাতে কাঠের স্থাপনা ভাঙচুর করে জমি দখল করার চেষ্টা করে। জানাগেছে, মো. হাবিবুল্লা তালুকদার পিং- আ. করিম তালুকদার ১৫/২০ জনের একটি দল রাতের আধারে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ জমি দখলের চেষ্টা টের পেয়ে আশপাসের লোকজন ঘটনাস্থল আসলে তাদেরকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি দেখায়। ততক্ষণে দুষ্কৃতিকারীর জনসাধারনের টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। গ্রাম পুলিশ মোস্তফা খানের স্ত্রী মিনা বেগম জানান, রাত ১১টার দিকে ২০-থেকে ২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধদল প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা মুনসুর ফকিরের বাড়ি পর পর ৪টি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে গ্রাম পুলিশ মোস্তফা খানের পাকা ভবনে পেট্রোল দিয়ে আগুন দেয় বিভিন্ন মামলামাল লুট করে নিয়ে যায়। এখনো ওই গ্রামের ৯টি পরিবারের কিছু মানুষ বাড়ি ছাড়া নারীরা থাকলে তারা রয়েছে আতঙ্কে। বনগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা রমেশ মুখাজির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, খাউলিয়া ইউনিয়নের সাবেক নারী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য শাহানাজ বেগম, ইউপি সদস্য মহিদুল ইসলাম, ফাসিয়া তলা গ্রামের মনিরুজ্জামান আকন, তার ভাই মনির আকন, প্রধান শিক্ষক মোস্তফা মাষ্টার ও মজিবুল বয়াতির বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়াও গত মঙ্গলবার দিনে ও রাতে বারইখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বিপুর বাড়িতে হামলা, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর ফরিদুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান জসিম মৃধা, মো. আনোয়ার হোসেন, লুৎফর চৌকিদার ও ফারুক দফাদার, কামরুল ইসলাম পলাশের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ঘটনা ঘটেছে। তেলিগাতি ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার বলেন, তার দুটি মৎস্য ঘেরের মাছ লুট করে নিয়েছে ও বসতবাড়ি থেকে গরু ও ছাগল নিয়ে গেছে। এছাড়াও ঢুলিগাতি ৪টি দোকান ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এখনো বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে।

পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক মজুমদার জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে কতিপয় লোকজন তার ইউনিয়ন পরিষদে ঢুকে কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর চালিয়েছে। ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বদিউজ্জামান মজুমদারের মৎস্য ঘেরের মাছ লুট করে নিয়েছে। ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবদুল লতিফ হাওলাদারের মৎস্য ঘের দখল করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এদিকে বহরবুনিয়া ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক মৎস্য ঘের দখল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত