ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সালাহউদ্দিন আহমেদের আগমন

পেকুয়ায় ঘরে ঘরে অন্যরকম আনন্দ

* এক নজর দেখতে হাজারো মানুষের অপেক্ষা * আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ
পেকুয়ায় ঘরে ঘরে অন্যরকম আনন্দ

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে মাসে ১৭০টি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে হতো। তার মাঝে রিমান্ডের নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে। যখনি বিএনপির দলীয় মুখপাত্রের ভূমিকা রাখা শুরু করছিলেন তখনি গুম হয়ে যান।

দুই মাস গুম রাখার পর একদিন মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেন। তখন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ অবস্থায় হেফাজতে নিয়েছে শিলং পুলিশ। পরবর্তীতে তার নামে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার পর ভারতে ৯ বছর অবস্থান শেষে খালাসপ্রাপ্ত হন। মামলায় খালাস হলেও সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে ফিরতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হলে গতকাল রোববার দেশে আসার ঘোষণা দেন। বলছিলাম পেকুয়ার কৃতি সন্তান, কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের কথা।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখছে। এদিকে সালাহউদ্দিন আহমেদ দেশে ফেরার ঘোষণায় কক্সবাজার জেলাসহ পেকুয়া উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের মাঝে দেখা দিয়ে আনন্দ।

সারাদিন ব্যাপী প্রতিবাদী কণ্ঠে সরব ছিল রাজপথ। সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্বাগতম জানিয়ে ব্যানার পোস্টার ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা স্বাগত মিছিল শুরু করেছে।

গতকাল রোববার বিকাল ২টায় থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে মিছিল ও আমজনতা বিএনপি কার্যালয়ে মানুষ জড়ো হয়। গতকাল দুপুর থেকে পেকুয়া উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশাল আনন্দ মিছিল করছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

পরে পেকুয়া উপজেলার বিএনপি সভাপতি বাহাদুর শাহ ও যুবদলের সভপতি কামরান জাদিদ মুকুট নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। মিছিলটি পেকুয়া বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বের চৌমুহনী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে দলীয় অঙ্গ সংগঠনে নেতারা বক্তব্য রাখেন, এই সময় পেকুয়া উপজেলায় যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদ মুকুট বলেন, ঐতিহাসিক বিজয়ের মুহূর্তে আমরা আপনারা যারা মিছিলে অংশগ্রহণ করেছি সবাই জিয়া সৈনিক। আমাদের সালাহউদ্দিন আহমদ দীর্ঘ ৯ বছর পর শেখ হাসিনা সরকার পতনে পর বাংলাদেশে ফিরে এসেছে।

আল্লাহ একজন আছে সেই কথা বসাইকে মনে রাখা দরকার। ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস আমাদের নেতা দেশে, শেখ হাসিনা নির্বাসনে। তিনি আরো বলেন, যতগুলো গুম হয়েছে, খুন হয়েছে, দখলবাজি করেছে সব আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে চলে গেছে। আপনাদের মনে রাখতে হবে অপকর্ম করলে কেউ বাঁচতে পারে না। আওয়ামী লীগ অপকর্ম করেছে বলে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। সুতরাং আপনাদের সবার উদ্দেশ্য বলব, নিজেকে সবাই সামঞ্জ্যস করুন। এখানে কোনো মারামারি দরকার নেই, দখলবাজির দরকার নেই, কোনো চাঁদাবাজির দরকার নেই। যারা করতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো অপকর্ম সহ্য করা হবে না। আমাদের নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ ছিল না বলে, এই পেকুয়াতে অনেকে অপরাধ করে পার পেয়ে গেছে। সতরাং বাইরের কথা কি বলব, আমরা অপরাধ করে পার পাওয়া সুযোগ নেই। সালাহউদ্দিন অপকর্ম পছন্দ করে না। চাঁদাবাজি পছন্দ করে না, দখলবাজি পছন্দ করে না মাস্তানি পছন্দ করে না, তাদের পরিণতি খুবই খুবই খারাপ হবে।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পেকুয়ার বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদ সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। চকরিয়া-পেকুয়ায় দুইবারের সাংসদ ছাড়াও স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সাংসদ নির্বাচিত হন। যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে থাকাবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান। আরো জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব পালনকালে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাকর্মীদের ধৃত করা শুরু করলে অজ্ঞাতস্থান থেকে দলীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন।

একপর্যায়ে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। তার ঠিক দুই মাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তাকে পাওয়া যায়। তখন ভারত সরকারের তরফে ঢাকাকে জানানো হয়, ‘উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফেরা’ অবস্থায় সালাউদ্দিনকে হেফাজতে নিয়েছে শিলং পুলিশ। পরবর্তীতে তার নামে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ মামলার শুনানি শেষে খালাস হলেও সাবেক সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে ফেরত আসতে পারেনি।

এই নিয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম বাহাদুর শাহ বলেন, পেকুয়ার সন্তান সালাউদ্দিন আহমেদ একজন জাতীয় নেতা। সরকারের রোষানলে পড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে খুব কষ্টে দিনাপাত করেছেন। বাংলাদেশে ও ভারতে থাকাবস্থায় ওনার নামে ১৭০টি মামলা রুজু করে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। আইনি প্রক্রিয়া শেষে প্রিয় নেতা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিল। দেশের মানুষ ও মাটিকে খুব ভালোবাসেন বলেই দেশে চলে আসলেন। অবশেষে সত্যের জয় হলো। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি সুস্থভাবে দেশের মাটিতে পা রাখতে পারায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত