গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গত তিন দিন ধরে বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজট সৃষ্টি হলে চরম দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে চলে যায়। এলাকাবাসী, পরিবহন শ্রমিক-যাত্রী ও কারখানার শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় নায়াগ্রা ট্রেক্সটাইল লিমিটেড নামে তৈরি পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। ওই কারখানার স্টাফদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া, শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। এছাড়াও তাদের ছুটির টাকা, রিজাইনের টাকা, মাতৃত্বকালিক ভাতার টাকাও দেয়া হচ্ছে না। কয়েকবার সময় দিয়েও তাদের পাওনাদি পরিশোধ করছেন না মালিকপক্ষ। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই কারখানার শ্রমিকরা। এজন্য বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে গত সোমবার থেকে শ্রমিকরা ওই কারখানার ভিতরে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। কিন্তু শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে হঠাৎ করেই কারখানা থেকে চলে যান মালিকপক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার সকালেও শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থল ওই কারখানার ভেতরে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। কিন্তু মালিক পক্ষের কাউকে না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। ওই মহাসড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করলে উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে তাদের শান্ত হয়ে কারখানার ভেতরে গিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। এরপর ধীরে ধীরে ওই মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ ও কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান ওই কারখানায় পরিদর্শনে যান। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত, পৌর মেয়র ও সেনা কর্মকর্তর সমন্বয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এ সময় সমস্যা সমাধানের জন্য বিকালের মধ্যে কারখানায় আসার কথা জানিয়েছেন মালিকপক্ষ। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমাদের নাম প্রকাশ করলে পরে খোঁজে খোঁজে কারখানা থেকে বের করে দিবে মালিকপক্ষ। কিন্তু স্টাফদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া, শ্রমিকদের এক মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। এছাড়াও তাদের ছুটির টাকা, রিজাইনের টাকা, মাতৃত্বকালিন ভাতার টাকাও দেয়া হচ্ছে না। গত ৩১ জুলাই, ১৪ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধের কথা দিয়েছিল মালিকপক্ষ। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে হঠাৎ করেই মালিকপক্ষ কারখানা থেকে চলে যায়। এদিকে আমাদের বকেয়া টাকা না দেয়ায় বাসা ভাড়া, দোকানের বিল বাকি পড়েছে। এছাড়াও আমরা টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের চাহিদা মিটাতে পারছি না। এখন আমাদের মাবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অতিদ্রুত বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করে আমাদের সুন্দরভাবে জীবনযাপনের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমরা ওই কারখানায় পরিদর্শনে যাই। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আজকের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা বলেছি। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা দিয়েছেন বিকেলে কারখানা এসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, ওই কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান করলে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলেও কোনো যানবাহনে ভাঙচুর করেনি। তবে মালিকপক্ষকে অতিদ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।