ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমিল্লায় জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই লাপাত্তা

স্থবির প্রশাসনিক ও নাগরিকসেবা কার্যক্রম
কুমিল্লায় জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই লাপাত্তা

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ দলীয় জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই এখন এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে রয়েছেন। তাদের অনেকের দলীয় পদণ্ডপদবিও রয়েছে। অনেকের মোবাইল ফোন এবং ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়েছে, অনেকের দপ্তরও তালাবদ্ধ। সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়েছেন। এদের মধ্যে আছেন সিটি কর্পোরেশন ও বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার বা সদস্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে জেলার অধিকাংশ স্থানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়নমূলক কাজ, ট্রেড লাইসেন্স, নাগারিক সনদ, জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যুসনদসহ যাবতীয় স্থানীয় নাগরিক সেবা কার্যক্রম। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। এমন স্থবিরতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে ১৭টি উপজেলা, একটি সিটি কর্পোরেশন, একটি জেলা পরিষদ, ৮টি পৌরসভা ও ১৯৩টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগপন্থি। তারা সরকার পতনের পর হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় এলাকা ছেড়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে এখনো প্যানেল মেয়র কিংবা প্যানেল চেয়ারম্যানের হাতে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ফলে সেবাপ্রার্থী প্রতিনিধি এলাকার হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তোপে পড়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এদিন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. তাহ্সীন বাহার সূচনা কুমিল্লা ছাড়েন। এদিন তার বাড়িটি লুটপাট করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার বাবা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, তিনি সদর আসনের এমপি ছিলেন। তারা কোথায় আছেন কেউ জানাতে পারেনি। এছাড়া কুসিকের আওয়ামী লীগপন্থি প্যানেল মেয়র এবং কাউন্সিলররা লাপাত্তা রয়েছেন।

সূত্র জানায়, এখন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় নাগরিক ভোগান্তি বেড়েছে। এ বিষয়ে কুসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি। কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুর রহমান বাবলুকেও তার কার্যালয়ে দেখা যায়নি। কয়েকজন কর্মচারী বলেন, সরকার পতনের পর থেকে তিনি অফিসে আসেন না, কোথায় আছেন তাও তারা জানেন না। এদিকে জেলার ৮টি পৌরসভার মধ্যে লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, বরুড়া, চান্দিনা, দেবীদ্বার, হোমনা ও দাউদকান্দি পৌরসভা মেয়রদের সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তবে সরকার পতনের পর থেকে বুধবার পর্যন্ত তাদের অনেকে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। তাদের অনেকের অফিস ও বাসা-বাড়িতে ভাংচুর করা হয়েছে। লাকসাম পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারির বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকার পতনের দিন হামলা হয়। বর্তমানে তিনি উধাও, মোবাইল ফোনও বন্ধ। হোমনা উপজেলা চেয়ারম্যান রেহেনা মজিদ অফিসে আসেন না। আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. আমিনুল ইসলাম টুটুলের বাসা-বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়। অফিস করছেন না তিনিসহ একই পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানরাও। দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের কেউই অফিসে আসেন না। আত্মগোপনে আছেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ রহমত উল্লাহ বাবুল এবং পৌরসভার মেয়র মীর হোসেন মীরু। বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বলেন, তিনি অফিসে যাচ্ছেন না, তবে বিকল্পভাবে কাজ করছেন। শিগগিরই অফিসে ফিরবেন। দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন ও পৌরসভার মেয়র নাঈম ইউসুফ সেইন অফিসে যান না। তারা বলেন, বিকল্পভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, পরিবেশ ইতিবাচক হলে অফিসে যাবেন। নাঙ্গলকোট পৌরসভার মেয়র ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল মালেক উধাও হয়ে আছেন। একই চিত্র জেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদে। আওয়ামী লীগপন্থি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অধিকাংশই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তবে দেবীদ্বার পৌরসভার মেয়র মো. সাইফুল ইসলাম শামীম গত সোমবার অফিসে ফিরেছেন। তার দাবি, পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে হওয়ায় তিনি অফিসে ফিরেছেন।

কুমিল্লা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপরিচালক এসএম গোলাম কিবরিয়া বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে উন্নয়ন কাজ ও নাগরিকসেবা যেন বিঘ্নিত না হয় সেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আমরা মাঠপর্যায়ে তথ্য চেয়েছি। কেউ অনুপস্থিত থাকলে বিধি-মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত মেয়র বা চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকছেন সেখানে প্যানেলের বিধান আছে। যদি প্যানেল মেয়র ও ভাইস চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তাহলে সরকার সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেবে এবং পরে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত