শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-অগ্নিসংযোগ
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
হাজী মো. শফিকুল ইসলাম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার সুযোগে তাদের শতাধিক বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগষ্ট থেকে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিএনপির নেতারা প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুকুল। জানা যায়, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। এ সুযোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের কয়েকটি কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা আওয়ামীলীগের প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনির টিপুরদী এলাকায় একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে। এতে তার প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাপের চর এলাকায় মিন্টু মিয়ার বাড়ি ও আষাঢ়িয়ারচর গ্রামে আব্দুল হালিম ও মেহেদী হাসানকে কুপিয়ে আহত করা হয়। সাবেক মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগমের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট। বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাবুল ও তার ভাই আমিনুল ইসলামের বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। শান্তিরবাজার এলাকায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। নুনেরটেক এলাকায় ইউপি সদস্য ওসমান গণিসহ নেতাকর্মীর ১৬ বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সাদিপুর ইউনিয়নের নয়াপুর গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সালাউদ্দিন মাসুমের বাড়ি, পঞ্চমীঘাট বাজারে আওয়ামী লীগের সমর্থক আইয়ুব আলী ও তার ভাই মামুন ভূঁইয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে পিক আপ ভ্যানে করে মালপত্র লুট করে। সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য রফিকুল ইসলামের দুটি বাড়ি ও সাদিপুর ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়। জামপুর ইউনিয়নের বশিরগাঁও এলাকার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুজাহিদ মল্লিকের নেতৃতে বজলুর রহমানের জায়গা দখল, বস্তল এলাকার পল্লী চিকিৎসক বসুর দোকান ভাঙচুর, কলতাপাড়া গ্রামের হাবিবুল্লাহর দুটি গরু লুট করে নিয়ে জবাই করে অনুষ্ঠান করা হয়। ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের বশিরগাঁও বাড়ি, মিরেরটেক বাজারে এশিয়ান টিভির সাংবাদিক পনির হোসেনের অফিস, মহজমপুর এলাকায় দুলাল ভূঁইয়ার অফিস ও বাড়ি, জামপুর গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য সুজনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। একই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা হরমুজ আলীর দুই ছেলে রনি ও মোহাম্মদ আলীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। পাকুন্ডা গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাদত আলীরসহ ১৭টি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তালতলা এলাকায় জামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ৫নং ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। তালতলা বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ হোসেনের দোকান, যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলামের বাড়ি ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কার্যালয় ভাঙচুর করে। সনমান্দি ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সাবুর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমানের চরলালের বাড়ি, অলিপুরা বাজারে তাকবিরের ঔষদের দোকান ভাঙচুর ও লুট করা হয়। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে গোবিন্দপুর গ্রামে আওয়ামী লীগের সমর্থক ইমনের বাড়ি ও চৌরাপাড়া গ্রামের আতাউরের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী এলাকায় কৃষকলীগের আহ্বায়ক করিম আহমেদের খামার বাড়িতে হামলা করে ১২টি গরু, হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেরা ও মাছ লুট করে নিয়ে যায় বিএনপির কর্মী সমর্থকরা। ওই বাড়ি দখল করে নতুন ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় প্রায় ২ কোটি অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়াও পৌরসভার দরপত এলাকায় তার আরো একটি খামারের প্রায় ১৭টি গরু লুট করা হয়। জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুকুল জানান, সরকার পতনের পর উত্তেজিত জনতা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন কিছু ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কে বা কারা এসব করেছে তা আমার বোধগম্য নয়। তবে আমাদের বিএনপি একটি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যেই দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সংখ্যালঘু নিরাপত্তা প্রদান ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি। সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, হাসিনা সরকারের আমলে হামলা, মামলায় হয়রানীর শিকার ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা এসব ঘটিয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হয়েছে। নতুন করে কেউ হামলা ভাঙচুরে জড়িত হলে দল থেকে বহিস্কার করা হবে। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, সব সময় সহবস্থানের রাজনীতি করেছি। দুই বার সাংসদ ছিলাম। কাউকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করিনি। আশা করি বিএনপিও সহবস্থানের রাজনীতি করবেন। যারা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন তাকে প্রতি সমবেদনা।