চাঁপাইনবাবগঞ্জে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মসিউর রহমান জেহাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
তীব্র লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রামাঞ্চলের জনজীবন। কিছুদিন আগেও বিদ্যুৎ পরিষেবা অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বর্তমানে জেলার বিভিন্ন এলাকাভেদে গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ বরাদ্দ কম পাওয়ায় হচ্ছে তীব্র লোডশেডিং বলছেন পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানি হতো বাংলাদেশে। এতে লোডশেডিং মাত্রা কম ছিল। আকস্মিকভাবে আদানি গ্রুপ ২৫ বছরের চুক্তিতে সংশোধন এনেছে। ফলে গত ১২ আগস্টের পর থেকে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আমদানি বন্ধ আছে। লোডশেডিং চলাকালীন দেখা যায়, তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নারী-পুরুষ এবং শিশুরা বাসা থেকে বের হয়ে গলিতে, বাসার দরজার সামনের রাস্তায় বসছেন। হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন অনেকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।
হাঁসফাঁসিয়ে উঠেছে জনজীবন- খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের পর থেকেই শুরু হয়েছে লোডশেডিংয়ের জ্বালাতন। গ্রামাঞ্চলগুলোয় দিন-রাত মিলিয়ে ৮-১২ বারেও বেশি বিদ্যুৎবিভ্রাটের ঘটনা ঘটছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক ঘণ্টার আগে আসে না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিকমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের মামুন অর রশিদ বলেন, তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। রাত দিন মিলিয়ে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গ্রামে গাছপালা থাকায় দিনের বেলায় খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু রাতে ঘুমানোর সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। এতে বৃদ্ধ ও শিশুদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
পরিস্থিতির সমাধান চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা- পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ- গত ৩-৪ দিন ধরে গ্রামাঞ্চলগুলোয় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে নাকাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। তারপরও কয়েকদিন পর থেকে শুরু হবে সংশোধিত রুটিনে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। লোডশেডিংয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় প্রভাব পড়েছে। এ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও। শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের দশরশিয়া এলাকার শিক্ষক সাইফুল রেজা বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ ছিল উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। আবারো নতুন রুটিন প্রকাশ করেছে। এখন যেভাবে লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে হিমশিম খাচ্ছে। যার প্রভাব তাদের পরীক্ষায় পড়বে। দ্রুত এ পরিস্থিতির সমাধান প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষোভণ্ড লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে কৃষিতেও। বিদ্যুৎ সংকটে জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া অনেকেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাতেও চার্জ দিতে পারছেন না। গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষক শ্রী চন্দন বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে জমিতে সেচ দিতে পারছি না। জরুরি প্রয়োজনে ডিজেলচালিত মেশিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করেছি। সময় মতো জমিতে পানি দিতে না পারলে ফসলের গাছগুলো মারা যাবে।
সদর উপজেলার চন্দ্রনারায়নপুর এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক রেজাউল ইসলাম জানান, দিন চুক্তিতে অন্যের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান তিনি। গত কয়েকদিন ধরে তার গ্রামে লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকমতো গাড়িটি চার্জে দিতে পারছেন না। কমে গেছে প্রতিদিনের রোজগার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন থেকে গ্রামাঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন। বর্তমানে ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামগুলোয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, খুব কম সময়ের মধ্যে এই সংকট কেটে যাবে।