সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবেদকের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শাকিল আহমেদ। প্রতিবেদককে ফাঁসাতে দফায় দফায় মিটিং করেছেন এসপি কার্যালয়ে। একপর্যায়ে পুলিশ সুপারকে বলেন ‘স্যার আপনি অনুমতি দিলে তাকে (প্রতিবেদকে) দশ মিনিটে তুলে নিয়ে আসব’। প্রতুত্তরে পুলিশ সুপার তার প্রস্তাবটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ভালো না এই কাজ করা যাবে না’। মিটিং থেকে বের হয়ে এসপির অনুমতি না পাওয়ায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন শাকিল। তাছাড়া ওই বৈঠকে ‘পুলিশের ইন্টারনাল বিষয়গুলো (প্রতিবেদকের) কাছে কীভাবে গেল তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিবেদককে ফাঁসাতে বিভিন্ন ‘ছক আঁকেন’ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা। এমনকি প্রতিবেদকের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থান জানার জন্য জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংবাদে আঁতে ঘা লাগা চক্রটি ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে প্রতিবেদকের জন্য নানা মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। ভাড়াটে লোক দিয়ে গত রোববার বিকালে প্রতিবেদকের কক্সবাজার শহরের বাসা ও গ্রামের বাড়ির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। দুইটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন করে প্রতিবেদকের শহরের বাসা কোথায় জানতে চেয়েছে চক্রটি। গত রোববার দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় ‘কক্সবাজারে পুলিশে অসন্তোষ, নেপথ্যে সিন্ডিকেট’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে জেলা পুলিশের শীর্ষ তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচ ওসির আঁতে ঘা লাগে। প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে রোববার সকাল থেকে কয়েকদফা বৈঠকে বসেন পুলিশের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। বেশির ভাগ বৈঠকে তাদের ইন্টারনাল খবর ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় তেমন কাউকে ডাকা হয়নি। ওই বৈঠকে চরমভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শাকিল আহমেদ।
তিনি আমাকে (প্রতিবেদক) কে ফাঁসানোর প্রস্তাব তুলেন। এসপিসহ অন্যরা বিষয়টি নাকচ করে দেন। ‘দেশের পরিস্থিতি ভালো না’ কৌশলে আগাইতে হবে বলে সান্ত¡না দেন শাকিলকে।
এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাকিল আহমেদের প্রসঙ্গে পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। উখিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন চৌধুরী তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, উখিয়ায়া-টেকনাফে সার্কেলের কর্মরত থাকাকালীন এডিশনাল এসপি শাকিল ছিলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বঘোষিত সভাপতি। ওসির চেয়ারে বসে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে হয়রানি করার ছক আঁকতেন শাকিল। ওসিকে তোয়াক্কা না করে নিজ হাতে লিখতেন এজাহার যাতে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতারা বাদ না যায়। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে ভোটের আগের দিন রাতে উখিয়া থানার ২য় তলায় তদন্ত ওসির রুমে এডিশনাল এসপি শাকিল আমার কাছে থেক তৎকালীন তদন্ত ওসি সালাউদ্দিনের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন নির্বাচন নিরপেক্ষ করবে বলে। তদন্ত ওসি সালাহউদ্দিন নেন ৫০ হাজার টাকা এএসপি শাকিল নেন ৩ লাখ টাকা। ১৮-৭-২০২১ সালের ভোটের দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্ন্ত নৌকার প্রার্থী ছৈয়দ আলমের পক্ষে এডিশনাল এসপি শাকিলের ইশারায় শুরু হয় জালিয়াপালং ইউনিয়নে ভোট ডাকাতির উৎসব। তিনি আরো লিখেছেন আমি আমার চাচার কষ্টে উপার্জিত টাকা ফেরত চাই। আমার চাচা নুরুল আমিন চৌধুরীর জয় জোরপূর্বক ডাকাতি করে ছিনিয়ে নিয়েছিল এই এডিশনাল এসপি শাকিল। দ্রুত এই কলংকিত এডিশনাল এসপিকে পুলিশ প্রশাসন থেকে বহিষ্কার করা হোক এবং আইনের আওতায় আনা হোক। ছাত্রদল নেতার এই স্ট্যাটাসটি চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপারের হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে নজরে আনা হলে তারা সিন করলেও কোন মন্তব্য করেনি। গতকাল যোগাযোগ করা হলে উখিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক আরাফাত হোসেন চৌধুরী বলেন, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে পুলিশ সুপারকে অবগত করা হয়েছে। যদি এখানে সুরাহা না হয়, তাহলে পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেল (ডিএনপিএস) লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করব।
তিনি আলোকিত বাংলাদেশ’র সংবাদের প্রশংসা করেন এবং প্রতিবেদকে ধন্যবাদ জানান।
সহকর্মীদের মানসিক হয়রানির পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে উখিয়া টেকনাফের বিশাল একটি অপহরণ, মাদক চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতার অভিযোগ রয়েছে। কারণ তিনি এর আগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) হিসাবে উখিয়া-টেকনাফে দায়িত্ব পালন করেছেন।