ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শান্ত পরিবেশ অশান্ত করলো নামধারী আ.লীগের সন্ত্রাসীরা

৯টি সরকারি দপ্তরসহ দেড় শতাধিক স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট
শান্ত পরিবেশ অশান্ত করলো নামধারী আ.লীগের সন্ত্রাসীরা

যশোরের কেশবপুরে শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসা ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতে কতিপয় নামধারী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হাতুড়ি বাহিনীরা নিরীহ দুই বিএনপি নেতা আবদুল হালিম অটল ও জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশকে চাপাতি ও লোহার রড দিয়ে হামলা চালিয়ে হত্যা প্রচেষ্টা চালায়। এরপরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গত ৪ আগস্ট এ ঘটনা ঘটার পর গোটা কেশবপুর শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা ১০টি সরকারি দপ্তর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের অফিস, কেশবপুর প্রেসক্লাব, পৌরসভার ভবন, ডাকবাংলোয় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায় উপজেলাব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে, ছয়টি সরকারি কার্যালয়ের সব নথিপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরদিন ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর খবরে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়। লুট হওয়া মালামাল ফিরে পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে াইকিং। আতঙ্কে শহরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪ দিন ধরে বন্ধ ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেশবপুরের নামধারী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি খন্দকার আজিজুল ইসলাম (হাতুড়ি বাহিনীর প্রধান) প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সমথর্ন দিয়ে আবার পরের দিন আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে তার নির্দেশে অনুসারী হাতুড়ি বাহিনীর সন্ত্রাসী পৌর কাউন্সিলর কবীর হোসেনের নেতৃত্বে খন্দকার শরিফুল, ইমরান হোসেন, টিপু সুলতান, রকি হোসেন, তানজিল, তরিকুল ইসলামসহ ২৫-৩০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে নিরীহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর উপজেলা পরিষদে ঢুকে ইউএনও‘র বাসভবনসহ কার্যালয় ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের দুটি কক্ষ, উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সবকটি কক্ষ, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের তিনটি কক্ষ, প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সবকটি কক্ষ, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্যালয়, যুব উন্নয়ন কার্যালয়, সমবায় কার্যালয়, আনসার ভিডিপি কার্যালয়, পরিসংখ্যান কার্যালয় ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়, উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের দরজা, জানালা, চেয়ার, টেবিল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং ভাঙচুর করে দুর্বৃত্ত কর্তৃক মালামাল লুট করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউএনও’র কার্যালয়ের পাঁচটি ল্যাপটপ, ছয়টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, মাল্টি মিডিয়ার প্রজেক্টর, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর, লুটপাটসহ আনুমানিক ২ কোটি ৭৮ লাখ ৮ হাজার ৩০০ টাকা, মৎস্য কার্যালয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার, সমাজ সেবার ২৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।

হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের ১ হাজার ৩০০ চাকরিজীবী ও ১ হাজার ৩০০ জন অবসর ভাতা গ্রহণকারীর সার্ভিস বুক, সমাজ সেবার ৩০ হাজার লোকের ভাতার নথিপত্র, কেশবপুর প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক দিলীপ মোদকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে। সমাজসেবা অফিসে বেসরকারি সংস্থার রেজুলেশনসহ কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় তা আর ফিরে পাওয়া যাবে না। একই সময়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের ব্যবহৃত তিনটি গাড়িসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৭টি মোটরসাইকেল ও সেবাগ্রহীতার ৭৩টি মোটর সাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দুর্বৃত্তরা কেশবপুর পৌরসভা ভবনের সকল কক্ষ লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে সকল নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় লুটপাট, ভাঙচুর করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয় ওই হাতুড়ি বাহিনী। কেশবপুর প্রেসক্লাবে হামলা, ভাঙচুর, চেয়ারে আগুন, সিসিক্যামেরা, ডিজিটাল সাইনবোর্ড ও তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ক্ষতি করে। শহরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের চালের আড়ৎ, সাধন কুন্ডুর চালের আড়ত, লোটো শোরুমের মালিক অহিদুজ্জামান, পৌর কাউন্সিলর মনোয়ার হোসেন মিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পাঁজিয়ার বিকাশ পালের গোডাউন, পলি জুয়েলার্স এর মোটর সাইকেল অগ্মিসংযোগ করে।

জানা গেছে, কমপক্ষে ১০টি দোকানপাট ব্যাপক ভাঙচুর, মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। উপজেলা ব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধরের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। এরমধ্যে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর ইবাদত সিদ্দিকী বিপুল, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ লাভলু ও পাঁজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনের বাসভবনসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট করে। গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবের বাসভবনে হামলা অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা সামাল দিতে সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে মানুষের ভীতি কমাতে কেশবপুর শহরসহ ১১টি ইউনিয়নে প্রচার মাইকিং করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও পাড়া-মহল্লায় যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য পাহারা বসান। যা এখনো পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে কেশবপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সাথে কেশবপুরে শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার মূল হতো তৎকালীন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি এক সময়ের হাতুড়ি বাহিনীর প্রধান খন্দকার আজিজুল ইসলাম ও তার বাহিনীরা বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনরা দায়ী করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুহিন হোসেন বলেন, সরকারিভাবে কার্যালয় পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত তাদের দাপ্তরিক কাজ বিকল্প জায়গায় করতে হবে। দপ্তরের কাজ চলছে উপজেলা সার্ভার স্টেশনে। হিসাবরক্ষণ ও মৎস্য অফিসের কাজ চলছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে, একটি টিনসেড ভবনে চলছে সমাজ সেবার কাজ, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কাজ, মাধ্যমিকের কাজ চলছে মধু শিক্ষা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এদিকে পৌরসভাসহ কমপক্ষে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত