বয়োবৃদ্ধদের পাশে টিএমএমএম মাসুদা প্রবীণ নিবাস
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আজাহার আলী, বগুড়া
প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা অবিমিশ্রধারায় সৃজিত বৃক্ষরাজী ঘনপল্লবের উপর শ্রাবণের বৃষ্টিধারা আকাশে মেঘের ডাক, অরণ্যের ভেতরে বাতাসের হু হু শব্দ দূরাকাশে চিলের ডাক, বৃক্ষের ডালে পাখি বসা, কাঠ ঠোকরাদের ঠক ঠক শব্দ, রাত্রিতে শিয়ালের চিৎকার ধ্বনি, শরতের রাত্রিতে ঝিল্লিধ্বনী সমৃদ্ধ আবহমান বাংলাদেশে চিত্রে পরিপূর্ণ টিএমএসএস মাসুদা প্রবীণ নিবাস ২০১৪ সালে পথ হাঁটতে শুরু করে। ঢাকা গুলবাগের এসএম মাছুদ হোসেন (৭০) বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া এলাকায় মোহাম্মাদ আলী (৮০) ও সদরের হাজেরা (৭০), সোনাতলা হরিখালির বাবলু মন্ডল (৬৫), সারিয়াকান্দির মাছিপাড়ার হেনা (৬০)সহ নানা বয়সি শতাধিক প্রবীণদের আবাসস্থল টিএমএসএস মাসুদা প্রবীণ নিবাস। প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধদের নিঃসঙ্গতা এবং একঘোরে হয়ে থাকার বাস্তবতায় প্রবীণ জীবনের এ অধ্যায়টি যেন সুখকর, তৃপ্তিকর, আনন্দমুখর হয় সেজন্যই টিএমএসএস কাজ করে যাচ্ছে। আপনের চেয়ে পর ভালো, পরের চেয়ে বৃদ্ধাশ্রম। কঠিন এক সত্য। আর এ সত্যকে মেনেই অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা আশ্রয় নেন বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানের কাছে যাদের বেশি কিছু চাওয়ার নেই, শেষ বয়সে আদরের সন্তানের পাশে থেকে সুখ-দুঃখ ভাগ করবার ইচ্ছা এতোটুকুই। আর এ নিয়েই প্রতিটি পিতা-মাতা প্রহর গুণতে থাকেন দিবা-রজনী। কিন্তু অনেকেরই সেই সন্তানের কাছে আশ্রয় না হয়ে; আশ্রয় হয় আপনজনহীন বৃদ্ধাশ্রমে। হয় নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, নয়তো অবহেলা দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছেন যেন তাদের পিতা-মাতা নিজেরাই সরে যান তার সাধের পরিবার থেকে। কেউ কেউ আবার এমনও বলেন, তার টাকার অভাব না থাকলেও সময়ের অভাব আছে, পিতা-মাতাকে দেখভাল করা বা তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো পর্যাপ্ত সময় তাদের নেই। বৃদ্ধাশ্রম অবহেলিত বৃদ্ধদের জন্য শেষ আশ্রয়। তাদের সারাজীবনের অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি, শেষ সময়ের সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়া হয়, টিএমএসএস মাসুদা প্রবীণ নিবাসে। এখানে তারা নির্ভাবনায়, সম্মানের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারেন। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসারও সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে। শুনলেই আতকে ওঠে অনেকের মন, আবার কিছু অভাগা বাবা-মায়ের শেষ জীবনে জোটে এ আশ্রম। সন্তানরা আশ্রয় না দিলেও তাদের দায়িত্ব নিয়েছে টিএমএসএস নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।
বগুড়া শহরের উত্তরে বাঘোপাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে মাসুদা প্রবীণ নিবাস। সেখানে পরম মমতায় শেষ জীবনের ঠাঁই মিলেছে, অসহায় বাবা-মা ও ঠিকানাহারা বয়োবৃদ্ধদের। রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ মায়েদের তুলে এনেছেন তারা। করছেন সেবা যত্ব, ব্যবস্থা করেছেন চিকিৎসার এবং থাকা খাওয়ার। শুধু তাই নয়, মৃত্যুর পরে এই মা-বাবাদের দাফন কাফন সবই করে এ বৃদ্ধাশ্রম। সন্তানের সুখ বঞ্চিত মায়ের অভাব কারো পক্ষেই পূরণ করা সম্ভব না। তারপরও দুঃখ ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় এখানে। নেয়া হয় নিবাসীদের যত্ন, সেবার ব্যবস্থা। নিবাসীদের সবার জন্য আমৃত্যু খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান ও বিনোদনের ব্যবস্থা। এখানে যারা থাকেন তাদের কেউ কথা বলতে পারেন না, কেউবা হাঁটাচলায় অক্ষম, কেউ চোখে দেখেন না, কারো আবার মানসিক সমস্যা। কারো স্বামী নেই, কারো স্ত্রী নেই। কারো আবার নেই কোনো পুত্র সন্তান। কারো আবার সন্তান থেকেও যেন নেই! আদতে তাদের পরিবারের কোনো খোঁজ নেই। তাদের কেউ পরিত্যক্ত, দুর্ভাগ্যক্রমে কেউবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। একেকজনের জীবনের গল্প একেক রকম। তবে এক জায়গায় মিল, জীবনে জুটেছে অনাদর, অবহেলা।