ব্যবস্থা নেয়া হয়নি টিকিট কালোবাজারি পারভেজের বিরুদ্ধে

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩ সদস্যকে দায়িত্ব পালনে হয়রানি

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কালোবাজারে বিক্রিকালে গনপিটুনির শিকার হয় পোটার পারভেজ হোসেন। তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারের পর আটক পোটার পারভেজ হোসেন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ৩ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়। ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট ৭ দিনের মধ্যে পেশ করার নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও রিপোর্ট পেশ করেননি রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ৩ সদস্যের কমিটি। নিরাপত্তা বাহিনীর তিনজনকে অন্যায়ভাবে রেলওয়ে তথা সরকারি আইন বহিরভূতভাবে ক্লোজ করার পর প্রায় ২ মাস যাবত কর্মস্থলে যোগ দেয়ার অনুমতি নাদিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর এই তিন সদস্য পরিবার চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। রেলওয়ে তিনজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে ক্লোজ করে বিভিন্ন স্থানে রাখার ফলে তাদের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া সন্তানরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা অভিভাবকের অভাবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং কালো মেঘে তাদের জীবন ডেকে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ কালে তারা জানিয়েছেন এদের অভিভাবকের অভাবে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের পড়ালেখার দিক বিবেচনা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁদপুর জেলা শাখার সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বিষয়টির প্রকৃত সমাধান দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেস্টা বরাবর হস্তক্ষেপ কামনা করবেন বলে জানান। এ বিষয়টি নিয়ে হয়রানির শিকার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্লোজ হওয়া তিনজন সদস্য সঠিক বিচারের আশায় আদালতের সরনাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেল বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। এদিকে এ ঘটনার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক চট্রগ্রাম রেলওয়ের সহকারী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বেই টিকিট কালোবাজারি কালে আটক হওয়া কর্মচারী পারভেজের বিরুদ্বে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ নাকরে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বেই গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. এসিও/১, চট্রগ্রাম মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত একটি অর্ডারের মাধ্যমে রেলওয়ের প্রথম শ্রেণির স্টেশন ফেনীতে (পোস্টিং) করে কাজে যোগদান করার অফিস আদেশ প্রদান করেছেন। যার স্মারক নম্বর: ৫৪,০১.১৫০০.২৫৪.০৪.০০১.২১-৬১৬। এ ঘটনায় চাঁদপুর রেলওয়ে কর্মচারীদের মধ্যে মারাত্মাক ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, গত ২৩ জুন ৮টি ট্রেনের টিকিট কালো বাজারে ১৮০ টাকার টিকিট ৪০০ টাকায় বিক্রিকালে রেল কর্মচারি (পোটার) পারভেজ হোসেনকে জনতা হাতেনাতে আটক করে গনপিটুনি দেয়। ঠিক তখনই ষ্টেশনে ডিউটিরত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এএসআই শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে হাবিলদার ইমাম হোসেন, নিরাপত্তা সিপাহি আবুল কালাম ও তারিকুল ইসলামসহ সঙ্গীয় ফোর্স পোটার পারভেজকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে রেলওয়ে থানার পুলিশের সহায়তায় রেলওয়ে থানায় নিয়ে যায়। গত ২৩ জুন চাঁদপুর বুকিং ক্লার্ক আরিফুল ইসলাম ৪৫টি টিকিট বিভিন্ন আইডিতে কম্পিটার থেকে বাহির করে যাত্রীদের কাছে বেশি দামে বিক্রির জন্য দিয়েছে বলে চট্রগ্রাম বিভাগীয় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে ২৪ জুন লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন বলে বুকিং ক্লার্ক আরিফুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। ঘটনার সময় তাক্ষনিক চাঁদপুরে অবস্থান করা লাকসামে কর্মরত (জে.আর.আই) টিটি ইনিসপেক্টর ড. আমিনুল হক ও চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) সোয়াইবুল শিকদার তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডিসিও/চট্রগ্রাম, এসিও/-১, চট্রগ্রাম এর সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টি রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্টকে অবগত করেন। পরে কালোবাজারে টিকিট বিক্রেতা পারভেজ হোসেন রেলওয়ে কর্মচারী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় মামলা নাদিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবে বলে চাঁদপুর স্টেশন মাস্টারের জিম্মায় থানা থেকে নিয়ে আসে। এ ঘটনার আলোকে গত ২৩ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেন। তদন্ত টিমের আহ্বায়ক করা হয় রেলওয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিবহন (বাণিজ্যিক) কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান, সদস্য এসি/আরএনবি রেজওয়ান উর রহমান এবং এটিও/-২, চট্রগ্রাম ফেরদৌস আলম। গত ২৪ জুন রেলওয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে ঘটনায় সংশ্লিস্ট সবাইর জবানবন্দি গ্রহণপূর্বক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে ঘটনাস্থল চাঁদপুরে হলেও তদন্ত কমিটি চাঁদপুর এসে এ ঘটনার প্রত্যক্ষ করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এখনো জিজ্ঞাসা বাদ করেননি। নিরাপত্তাবাহিনীর ৩ সদস্যকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা দীর্ঘ প্রায় ২ মাসেও রিপোর্ট প্রকাশ নাকরে এসিও/চট্রগ্রাম-১, মো. মেহেদী হাসান, ডিসিও/চট্রগ্রাম, ডিআরএম, চট্রগ্রাম নিরাপত্তা বাহিনীর তিনজন সদস্যকে অপরাধজনকভাবে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট এবং কমান্ড্যান্টকে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে এ নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ তিনজনকে ক্লোজ অবস্থায় প্রথমে চট্রগ্রাম ট্রেনিং সেন্টার, তারপর লাকসাম, পরবর্তীতে কমান্ড্যান্ট চট্রগ্রাম এর মৌখিক নির্দেশে কুমিল্লায় কেøাজ করে রাখেন। এ তিনজনের মধ্যে সিপাহী আবুল কালাম ক্লোজ অবস্থায় রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বেই গত ১২ জুলাই নিয়ম মোতাবেক চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার (ডি.আর.এম) মো. সাইফুল ইসলাম জানান,চাঁদপুরের ঘটনায় কাউকে ক্লোজ ও সার্সফেন্ড করা হয়নি। চাঁদপুরে টিকেট কালোবাজারি হচ্ছে, এ ধরনের ঘটনায় তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনিয়ম হচ্ছে, সাপেক্ষে এটি করা হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তদন্ত রিপোট দেয়ার জন্য বলে দিব। তদন্তর রিপোট আসলে রিপোট সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যায় কোনো কাজ আমার দপ্তর থেকে হবে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, এ ঘটনার আলোকে আমার দপ্তরের একজনকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও তদন্ত কমিটির একজন বিদেশে থাকার কারণে রিপোট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। সহসাই রিপোট পেশ করা হবে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদেরকে দপ্তর আদেশ করেছি। এখন তদন্ত রিপোট প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।