নোয়াখালী জলাবদ্ধতা
পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষ
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নোয়াখালী প্রতিনিধি
কয়েক দিনের ভারি ভর্ষণে তলিয়ে গেছে পুরো নোয়াখালী। জেলার ৯টি উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। এতে লোকজনের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। খাল উদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, টানা এক সপ্তাহের ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে পুরো নোয়াখালী জেলাজুড়ে। জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজি। এ ছাড়া মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক খেতে আমন লাগাতে পারছেন না। জলাবদ্ধতায় আটকে আছে ২০ লাখ মানুষ। ডুবে গেছে সড়ক, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় দীর্ঘ সময়ের ব্যাপক জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নোয়াখালীবাসীর। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় দ্রুতই জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান পানিবন্দি মানুষজন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত সোমবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম চর উরিয়ার বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বাড়ির চারপাশে পানি ওঠে গেছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। গতরাতের টানা বৃষ্টিতে পানি এখন রান্না ঘরে ঢুকে গেছে। বাড়ির কেউই ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ফলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, শহরের সব রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মানুষের বাসার ভিতরে পানি থৈ থৈ করছে। এতে মানুষ বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। রাস্তা ফাকা হয়ে গেছে। যার কারণে কোন যাত্রী পাচ্ছি না। বাড়িতেও পরিবারের লোকজন পানিবন্দি রয়েছে। কিভাবে বাঁচবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, রাস্তাঘাট ডুবে এখন মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকে গেছে। মাছের ঘেরসহ সব ভেসে গেছে। এত পানি আগে দেখিনি। বৃষ্টি হলে পানি নেমে যায় কিন্তু এবার পানি নামছে না। পানিবাহিত অসুখ বেড়েই চলছে। কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা রুবেল বলেন, হাঁটু পানি দিয়ে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথা কোথা খাল দখল করে বাড়িঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পানি নামছে না। সেনাবাহিনী এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে খাল পরিষ্কার করে দিলে জলাবদ্ধতা থাকতো না।
সেনবাগ উপজেলার ইব্রাহিম বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে পানি জমেছে। রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে আজ রান্নাও করতে পারিনি। কলের পানিতে ময়লা আসে। আমরা অসহায় অবস্থায় আছি। সুবর্ণচর উপজেলার হারিচ চৌধুরী এলাকার বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বলেন, সুর্বণচরের বেশিরভাগ এলাকার কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। প্রশাসন যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে কৃষক বাঁচতে পারতো। জেলাজুড়ে জলবদ্ধতার কারণে নিন্ম আয়ের মানুষ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টির পানিতে ময়লা মিশে দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগ। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসন ও ধনীদের আহবান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নোয়াখালীর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত সোমবার ভোর ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু সতর্ক সংকেত চলছে আমরা জেলেদের তীরবর্তী স্থানে থাকতে বলেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। এ ছাড়া জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছে না। আমরা জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এতে করে সব উপজেলায় পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা। তা ছাড়া পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, সকলের সহযোগিতায় আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। এরই মধ্যে বিভিন্ন অবৈধ বাঁধ কেটে পানি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি কমে যাবে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সব মাধ্যমিক, প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে। যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তা করছি।