সুবিধা বঞ্চিত উত্তরাঞ্চলের ছোট্ট জেলা শহর সিরাজগঞ্জে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রথম ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের নাম ‘জুয়েলস অলফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’। যে স্কুলটি বৃটিশ আন্তর্জাতিক শিক্ষা বোর্ড এডেক্সেলের জাতীয় পরীক্ষা কেন্দ্র ও ব্রিটিশ কাউন্সিল গোবাল নেটওয়ার্কের পার্টনার স্কুল হিসেবে স্বীকৃত। প্রায় দু’যুগের অসংখ্য অর্জনের পথিকৃৎ সিরাজগঞ্জের খ্যাতনামা এই বিদ্যাপীঠটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই আকস্মিকভাবে হামলা, ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ব্যিালয়ের মূল্যবান জিনিসপত্র, ডকুমেন্ট লুটপাট করা হলো; এসব করে একটি বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়ে হামলাকারীদের কী লাভ হলো তা আমাদের জানা নেই! অথচ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ বা তার পরিবারের কেউ সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। মেধার উপর ভিত্তি করে স্বউদ্যোগে তিল তিল করে গড়ে তোলা ‘জুয়েলস অক্সফোর্র্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’র খ্যাতিই কী তাহলে কাল হলো, সেটিও আমাদের জিজ্ঞাসা? এই প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের আশেপাশের জেলা সমূহের শির্ক্ষাীরা স্বল্প খরচে, এমন কী প্রচলিত বাংলা মাধ্যমের চেয়েও তুলনামূলক কম খরচে O লেভেলস এবং A লেভেলস অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছে। এটি সিরাজগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছে স্বীকৃত বিষয়। ‘জুয়েলস অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ থেকে প্রায় প্রতি বছরই সংখ্যার হারে তুলনামূলক সর্বোচ্চ A স্টার অর্জন বা ব্রিটিশ বোর্ডের হাই এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড বা জাতীয় পর্যায়ের ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে! নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির সন্তানরে সম্পূর্ণ বা আংশিক বৃত্তি নিয়ে আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, হংকংসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্বব্যিালয় সমূহে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিতে পারার যোগ্যতা অর্জনের কারণেই কী জুয়েলস অক্সফোর্ড’র উপর হামলা করা হয়েছে? নাকি কারো ব্যক্তিগত ইন্ধনে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা হলো?
ভাবলে অবাক হতে হয় যে, এই সিরাজগঞ্জের বহু সংখ্যক শিক্ষার্থীরে জুয়েলস অক্সফোর্ডই আমেরিকার কেনেডি লুগার স্কলারশিপে সম্পূর্ণ বিনা খরচে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে লেখাপড়ার করার সুযোগ করে েিয়ছে!
অথচ সুশোভিত জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডসহ, বহিরাঙ্গনের অন্যান্য স্ট্যান্ডসমূহ, বিভিন্ন অর্জনের প্রজেকশন বোর্ড, ডেকোরেটিভ জিনিসপত্র ভাঙচুর লুটপাট করে, দাপ্তরিক কাগজপত্র, বোর্ড সার্টিফিকেট, লাইব্রেরির বই পুস্তক, সব কম্পিউটার, প্রজেক্টর, মাল্টিমিডিয়া বোর্ডসমূহ, গেটের এক্সেস কন্ট্রোল’র ডিভাইস সমূহ সিসি ক্যামেরার যাবতীয় জিনিসপত্র, সিনিয়র স্টুডেন্টদের জন্য স্থাপিত বাস্কেটবল বোর্ড থেকে শুরু করে শিশু এবং জুনিয়রদের জন্য স্থাপিত বিভিন্ন খেলাধুলার রাইড, এসি, ইলেকট্রিক ফ্যান, জেনারেটর এমনকি ক্লাসরুমের চেয়ার টেবিল পযন্ত নিয়ে চলে গেছে হামলাকারীরা। মোটকথা, দীর্ঘ ২৪ বছরে তিলে তিলে করে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান, সদর হাসপাতাল রোডের ক্যাম্পাসের ভবন সমূহের দেয়াাল, দরজা ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট রাখা হয় নি। নিউ ঢাকা রোডের বিদ্যালয়ের নিজস্ব ও আবাসিক ক্যাম্পাসে কতিপয় দুর্বৃত্ত আংশিক ভাঙচুর করে, দায়িত্বরত ব্যক্তিদের মারধর করে চাবি কেড়ে নিয়ে তালা লাগিয়ে অধ্যক্ষ পরিচালকদের খুঁজে বেড়াচ্ছে তারই বা উদ্দেশ্য কী?
প্রাণ ভয়ে বিচলিত শিক্ষক কর্মচারী বা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। শত শত কচি কাঁচাসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বুকভাঙ্গা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যখন কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে আমাদের ক্লাস কবে শুরু হবে? বুকফাটা হাহাকারে হৃয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেলেও আমরা উত্তর দিতে পারি না, কারণ উত্তর জানা নেই আমাদের। কেউ জানেন কী? জানা থাকলে ওইসব কোমল প্রাণের নির্মম প্রশ্নের উত্তর অনুগ্রহ করে আপনারাই দেবেন। আমরা শুধু চাইতে পারি, ভালো থাক বাংলাদেশ!
মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে। বিদ্যালয়েরর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বা আমরা পরিচালনা পর্ষদ যে ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে তা বলছি না! ভুলত্রুটি, মানুষের বিরাগভাজনতা থাকতেই পারে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করতে গিয়ে দীর্ঘ সময়ের অনেকের কথা, সুপারিশ হয়তোবা রাখা সম্ভব হয় নি কিংবা আমাদের চলাফেরা, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার মধ্যে কোনো ভুল হতে পারে, তাই বলে বহু ত্যাগে গড়ে তোলা দীর্ঘেিনর একটি বিদ্যালয়ের ধ্বংস কারো কাম্য হতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা প্রতিষ্ঠানগত রাগ-বিরাগভাজনের ঊর্ধে থেকে সিরাজগঞ্জের সব ক্ষেত্রে উন্নত পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারবো। সে ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতায় আমাদের আগামীর পথ চলবো। পরিশেষে, দেশবাসী, সিরাজগঞ্জ জেলার আপামর জনসাধারণ, তরুণ ছাত্র সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন, বিশেষত নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ধ্বংস যজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানাই।