২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখে সেবার মান বাড়াতে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। গত দুই সপ্তাহ তারা তদারকি করে দৃশ্যমান সমস্যাগুলো বের করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেন আলোচনায়। গতকাল বুধবার হাসপাতালের মিলনায়তনে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিয়া। শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক পরিদর্শনে ভর্তি রোগীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, সরকারি ওষুধ বিতরণে অনিয়ম, প্যাথলজি ল্যাবে পরিক্ষা হবার পরেও বাইরে রোগী পাঠানো, আউটডোর ও ইনডোর চিকিৎসা সেবায় অবহেলা, গুরুত্বপূর্ণ মেশিন অকার্যকর হয়ে পরে থাকলেও ঠিক করার উদ্যোগ না নেয়া, লিফট অকার্যকর হয়ে রোগীদের ভোগান্তি, দালালের দৌরাত্ম্য, টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বানিজ্য, হাসপাতালে ভিতরে মাদক সেবন, রোগীদের জিনিসপত্র চুরি, ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের দিয়ে চিকিৎসা করানো, প্রয়োজনীয় ডাক্তারের ঘাটতি সহ বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসে। এসময় শিক্ষার্থীরা এই বিষয় গুলো কিভাবে হচ্ছে তা জানতে চান। পরে শিক্ষার্থীরা সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি নির্মুলের দাবি করেন। এ সময় শিক্ষার্থী মোর্শেদ জিতু জানান, সদর হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম অসংগতি সবার জানা। এখন সময় এসেছে সেগুলো ঠিক করার। তাই আমরা এসেছি হাসপাতালে, দেখেছি হাসপাতালের অবস্থা। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা পর্যবেক্ষণ করে যে অসঙ্গতি পেয়েছি তা একে একে বলেছি। জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতালে এমন সেবা মানা কষ্টের। কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শুনেছে এবং সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থী ফারহান ফুয়াদ তুহিন বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছি ইন্টার্নি দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে, রান্নাঘরের পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত না, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না, চিকিৎসকরা ঠিক সময় হাসপাতালে আসছেন না। এছাড়াও অনেক যন্ত্রপাতি হাসপাতালে না থাকায় সেবা পাচ্ছেন না মানুষ। এছাড়াও দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হচ্ছে অনেক মানুষ। সব বিষয় নিয়ে আমরা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধান না হলে আমি সংস্কারের উদ্যোগ নিবো। প্রয়োজনে আন্দোলনে যাব। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেলিম মিয়া বলেন, ছাত্ররা অনেক বিষয় পরামর্শ দিয়েছে আমরা সেগুলো নোট করেছি। কিছু বিষয়ে অন্যান্য দপ্তরগুলোকে সংযুক্ত করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট প্রয়োজন হবে। তবে হাসপাতালের নিয়ম শৃঙ্খলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ভালোবাসা তৈরিসহ আন্তরিকতার সাথে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সিভিলে সার্জন ডা. জসিম তার বক্তব্যে বলেন, আমরা আমাদের সীমিত বাজেট ও জনবল দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। হাসপাতালের বেড বেড়েছে; কিন্তু বাজেট বাড়েনি, জনবল বাড়েনি। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে একমত হয়েছি। তারা সুন্দর সুন্দর পরামর্শ দিয়েছে। এখন সময় কাজ করার। আমরা সেবা নিশ্চিতে কাজ করতে সকলের সহযোগিতা চাই।