গত কয়েকদিন টানা ভারী বর্ষণ ও অতি জোয়ারে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরশহর ও উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় কৃষকের শত শত হেক্টর আমন বীজতলা তলিয়ে রয়েছে জলাবদ্ধতায়। জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল আমন বীজতলা নষ্টের শঙ্কায় হতাশায় রয়েছেন কৃষক। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বীজ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি সহায়তা দাবি করেন এসব এলাকার কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, গেল আষাঢ় থেকে ২/৩ দফা বীজতলা করেও ভারী বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে ২/৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে বাঁচাতে পারেনি বীজতলা। বেশির ভাগই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। সবশেষে শ্রাবণের শেষের দিকে বীজ তলা করেও তা গত কয়েকদিন টানা বর্ষণ ও অতি জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় তাও বাঁচানো যাবে কি না শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। এ দিকে আমন বীজতলা করার আর এখন সময়ও তেমন নেই এবং কৃষকের কাছে বীজতলা করার মতো কোনো বীজধানও নেই। এ কারণে এ বছর আমন বীজের (চাড়া) ভিষণ সংকট দেখা দিবে বলে মনে করেন অনেক কৃষক। এ সংকট মোকাবেলায় উচ্চ/চড়া দামে বীজ (ধানের চাড়া) কিনতে হবে কৃষককে। কিন্তু বীজ (ধানের চারা) কৃষক ফসল ফলিয়ে তেমন লাভবান হবেনা বলে মনে করেন কৃষকরা। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, মোরেলগঞ্জ মোট ২৩ হাজার ৩৯৩ জন চাষীর মাধ্যমে এবার ৬০ হাজার ৪৩৯ হেক্টর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিআর-১১, বিআর-৫২ ও বিআর-২২ জাতের ধান চাষের জন্য ৩ হাজার ৩৫২ হেক্টর বীজতলা তৈরি করা হয়। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে সব বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। শুধু মোরেলগঞ্জ নয়, রামপাল, মোংলা, ও শরণখোলায় অধিকাংশ এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বীজ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি সহায়তা দাবি করেন এসব এলাকার কৃষক। এলাকার চাষি হামিদ বলেন, আমার ১৬০ কেজি আমন বিজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য ডিলারের কাছে বীজধান কিনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ডিলারের কাছে বীজ ধান পাইনি। এই বছর মনে হয় চাষাবাদ হবে না যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা না করে। মোরেলগঞ্জ উপজেলার ভাই ভাই স্টোরের স্বত্বাধিকারী বীজধানের ডিলার সুখদেব হালদার বলেন, সম্প্রতি বৃষ্টিতে বীজধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাদের কাছে অনেক কৃষক এসেছেন। কিন্তু আমরা কাউকে বীজ দিতে পারছি না। বীজধান সংকটের কারণে আমরা কাউকে বীজ দিতে পারছি না। মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণ ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে আমন বীজতলা ডুবে থাকায় পচন ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরো বলেন-চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৯১৫ একর জমিতে স্থানীয় জাতের ও ৯০৩ একর জমিতে উফশী জাতের আমন বীজতলা কৃষকরা করেন। জলাবদ্ধতার অতিরিক্ত পানিতে ডুবে থাকা বীজতলা থেকে ২/১ দিনের মধ্যে পানি না কমলে বীজ পচে নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে অনেক কৃষকেরই বীজ তলা ভালো রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, খাল ভরাট, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ ও যত্রতত্র অপরিকল্পিত কালভার্টসহ বিভিন্ন কারণে ফসলের মাঠের অতিরিক্ত পানি সরে যেতে পারে না এবং কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানি এ অব্যবস্থাপনার কারণে সঠিক সময় পানি নিষ্কাশন করতে পারেন না কৃষক। যার ফলে প্রতি বছরই ভারী বর্ষণের জলাবদ্ধতায় কৃষকের বীজতলাসহ বিভিন্ন আবাদ নষ্ট হয়।