চলতি বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তের ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে গত কয়েকদিনে দেশের সিলেট, কুমিল্লা, ফেনীসহ ১০টি জেলায় মানবসৃষ্ট বন্যা দেখা দেয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হঠাৎ করে বেড়িবাঁধের কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাতশালা বিশ্বাস পাড়া, ভাতশালা-কোমরপুর স্লুইসগেট, সুশীলগাতি, দেবাহাটা সদর থেকে বসন্তপুরগামী বেড়িবাঁধ ও নাংলা গাংআটিপাড়াসহ ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভাজনকারী সীমান্তের ইছামতি নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে এসব এলাকার বেড়িবাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।
এরই মধ্যে বেড়িবাঁধের কিছু কিছু অংশ নদী গর্ভে ধ্বসে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বেড়িবাঁধের এসব অংশে ক্রমশ ফাটলের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরা। ইছামতি নদীর পাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা জানান, ইতিপূর্বে পার্শ্ববর্তী সুশীলগতি, কোমরপুর ও নাংলা এলাকায় সীমান্তের ইছামতি নদীর ভেড়িবাঁধ ভেঙে আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। এভাবে বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙতে থাকলে বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে সীমান্তের বাসিন্দাদের।
বেড়িবাঁধের এসব ভাঙন পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে কংক্রিটের ব্লক, বালিভর্তি বস্তা ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে বসবাসকারী বাসিন্দারা। তারা বলেন, বাঁধ ভাঙার আগে ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার পাউবো কর্তৃপক্ষ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলেই কেবল ভাঙনকবলিত এলাকায় তা মেরামতের কাজ শুরু করেন। ভাঙনের আগে থেকে তারা তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। সাতক্ষীরা পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তার গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপকূলের অধিকাংশ এলাকার বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। সময়মতো ভাঙন পয়েন্টগুলো মেরামত না করায় বর্ষা মৌসুমে অথবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সামান্য জলোচ্ছ্বাসে এই দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো সহজেই ভেঙে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই সীমান্তের ইছামতি নদীর ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বর্তমানে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি একটু বেশি বাড়ছে। এতে করে সীমান্তের ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাঙনকবলিত এলাকা আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন পয়েন্টগুলো মেরামতের কাজ করা হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী শুভেন্দু বিশ্বাস বলেন, এরই মধ্যে আমরা ভাঙন পয়েন্ট গুলো পরিদর্শন করেছি। আপদকালীন কাজ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে এসব ভাঙন পয়েন্টগুলো মেরামত করা হবে। যতদ্রুত সম্ভব বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করে সীমান্তের মানুষগুলো যাতে রক্ষা পায় তার জন্য এলাকাবাসী দাবি জানিয়েছেন।