গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। এর মধ্যে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন, আখ ও মৌসুমি সবজির। তবে জেলা জুড়ে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার কথা জানালেন জেলা কৃষি বিভাগ। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার সেচ প্রকল্প এলাকায় ৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে ফসলি জমিগুলো প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বীজতলা। এই উপজেলায় এ বছর ১৬২ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। রোপন করা হয়েছে ৩৯০ হেক্টর। আর আখের আবাদ করা হয়েছে ১২৮ হেক্টর জমিতে। চলতি মাসের শেষের দিকেই আখ কর্তন শুরু হবে। শাক সবজি আবাদ করা হয়েছে ১৬০ হেক্টর। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার চান্দ্রা, মদনের গাঁও, মানিকরাজ, গাজীপুর, কেরওয়া, ধানুয়াসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখাগেছে অধিকাংশ আখের জমি ক্ষতিগ্রস্ত। জলাবদ্ধতার কারণে আখগুলো নুয়ে পড়েছে। আর রোপা আমন এবং বীজতলা অধিকাংশ তলিয়েগেছে। সদর উপজেলার বাগাদি সোবহানপুর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর ও রিয়াদ হোসেন বলেন, সেচ প্রকল্প এলাকায় অনেক কৃষক বর্গা চাষি। অন্যের জমি চাষ করে তাদের সংসার চলে। টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন পানির নিচে। পানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে বীজ রোপনও করতে পারেননি। আর যেসব কৃষক ঋণ করে বিআর-৪৯ ধান রোপন করেছেন তারা আছেন দুশ্চিন্তায়। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি বিভাগ থেকেও কোনো লোকজন আসেনি। পানি নিস্কাশনের জন্য সেচ পাম্প গুলো চালু রাখার দাবি তাদের। ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানিকরাজ গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে আমাদের সব ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে রোপা আমন আবাদ পুরোপুরি ব্যাহত হবে। একই এলাকার আখ চাষি অহিদুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতায় আখের মধ্যে পচন লাগে। বিক্রি করলেও দাম পাওয়া যাবে না। আমরা এবার আখে পুরোপুরি লোকসান দিতে হবে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, বৃষ্টির পানিতে উপজেলার অনেক ফসল নিমজ্জিত। বৃষ্টি কমলে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিবে তারা যাতে নাবি জাতের অর্থাৎ আমনের বিআর-২২ ও ২৩ জাত আবাদ করতে। এর জন্য বীজের পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলছি। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে চাঁদপুরে রোপা আমন ব্যহত হচ্ছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত এবং রোপা আমন লাগানো বিলম্বিত হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে। আমরা অন্যান্য দুর্যোগের সময় কৃষকদের যেমন তালিকা করি, এক্ষেত্রে সেভাবে তালিকা করা হবে। যাতে করে পরবর্তী মৌসুমে এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণদোনার আওতায় আনা যায়।