ত্রাণের জন্য হাহাকার
আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
মিরসরাইয়ে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে শতশত মানুষ। উদ্ধার কর্মীরা বাড়িতে আটকে পড়া লোকজনকে বোটে করে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন। উপজেলায় বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজ, ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় ৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্র ২০ হাজার জন আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া বন্যা প্লাবিত বিভিন্ন গ্রামের দৌতলা ও উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন হাজারো মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার সংকট। স্থানীয় দোকানগুলোতেও নেই পর্যাপ্ত শুকনো খাবার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে ৪৫ কিলোমিটার জুড়ে দেখে দিয়েছে তীব্র যানজট। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা শতবর্ষী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, নতুন করে গত বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার ওচমানপুর, কাটাছড়া, ইছাখালী, খৈইয়াছড়া, মিঠানালা ও মায়ানী ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। ফেনী নদীসংলগ্ন চারটি ইউনিয়নে বন্যার পানি এখনও কমেনি। এসব ইউনিয়নের মধ্যে করেরহাট, ধুম ও হিঙ্গুলীর অনেক বাসিন্দা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও চিকিৎসাসেবা দিতে উপজেলার জোরারগঞ্জ ও করেরহাট ইউনিয়নে দুটি ক্যাম্প করেছে সেনাবাহিনী। বন্যার পানিতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্ধি থেকে অনেককে ট্রাকযোগে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে দেখা গেছে। এদিকে ধুমঘাট হাজী চাঁন মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে লায়লা খাতুন নামে শতবর্ষী এক বৃদ্ধা মহিলা মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩ টায় তার মৃত্যু হয়েছে। লায়লা খাতুন হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মেহেদী নগর গ্রামের খুরশিদ আলমের স্ত্রী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরের ছাপা বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আসা শতবর্ষী লায়লা খাতুন স্বাভাবিক অবস্থায় মারা গেছেন। গত শুক্রবার বিকেলে বারইয়ারহাট পৌর এলাকার তার নামাজের জানাযা শেষে দাফন করা হয়েছে। করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিমজোয়ার এলাকার বাসিন্দা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, তার ঘরের নীচ তলায় গলা সমান পানি। পরিবার নিয়ে ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। কোনো রকমে বেঁচে রয়েছেন। পানি নামার কোনো লক্ষণ দেখছেন না। ওচমানপুর ইউনিয়নের পাতাকোট থেকে আসা গৃহবধু নুর জাহান বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের বাড়িতে কোমর পরিমাণ পানি ছিল। কিন্তু গত শুক্রবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকে। গতকাল শনিবার সকালে পানি প্রায় গলা পর্যন্ত ছুঁই ছুঁই। কয়েকজন আত্মীয় মিলে একটি নৌকা নিয়ে পরিবারের ৪ সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আবুরহাট এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বৃদ্ধ নাছির উদ্দিন বলেন, আমার জীবনে এতো পানি দেখিনি। কাল থেকে পানি অনেক বেড়ে গেছে। তারপরও আমি আসতে চাইনি। সবাই জোরাজুরি করার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। জেবি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র আসা টুকুরানী দাস বলেন, আমার বয়সে কোনোদিন এত পানি চোখে দেখিনি। কখনো বন্যার সময় ঘর থেকে বের হইনি। এবার অনেক চেষ্টা করেছি ঘরে থাকতে, কিন্তু পারলাম না। বাধ্য হয়ে এখানে উঠেছি। ১৯৯১ সালের বন্যার চেয়ে এবারের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে ৪৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সৃষ্টি হওয়া যানজট এখনো নিরসন হয়নি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার গাড়ি। যাত্রী ও চালকদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। তবে সড়কে কোথাও থানা, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ চোখে পড়েনি। মহাসড়কের বিভিন্ন ইউটার্নে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের। মহাসড়কের মুহুরীগঞ্জ থেকে লালপোল পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লেইন পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানির ¯্রােত দেখা গেছে সড়কে। এ কারণে ঢাকামুখী লেইনে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ সোহেল সরকার বলেন, পুলিশ রাস্তায় দায়িত্ব পালন করে লাভ হবে না। কারণ পানির কারণে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। পানি নেমে গেলে যানজট নিরসন হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, বিভিন্ন গ্রামে পানি উঠে যাওয়ায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে ৭টি পিডারের অধীনে আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। পানি নামলে পুনরায় সংযোগ চালু করা হবে। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডিজিএম হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, গত ৩ দিন ধরে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ধুম, ওচমানপুর ইউনিয়ন ও বারইয়ারহাট পৌরসভার আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। যেখানে প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। পানি নেমে গেলে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, কয়েকটি ইউনিয়নে পানি বেড়ে গেছে। উপজেলার ৭৯টা আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। মিরসরাইয়ের স্থানীয় বাজারগুলোতে শুকনো খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।