ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যা না হলেও বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগ

বন্যা না হলেও বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বন্যা না হলেও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

এতে বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্দ না পাওয়ায় উপজেলার শিক্ষকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, গত মধ্য জুনে ও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে স্বল্পমেয়াদে দুদফা বন্যা হয় ভূরুঙ্গামারীতে। এতে উপজেলার পাইকডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল করিম ১৫০০ সপ্রাবি, শালজোড় সপ্রাবি, উত্তর ধলডাঙ্গা সপ্রাবি, পূর্ব ধলডাঙ্গা সপ্রাবি, ১নং চর ধাউরারকুটি সপ্রাবি, ২নং চর ধাউরারকুটি সপ্রাবি ও ভরতেরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে বলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে জানানো হয়। কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তা দুই কর্মচারীর যোগসাজসে বদলে যায়।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দক্ষিণ চর বাড়ুইটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ২ লাখ টাকা, পশ্চিম বেলদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ লাখ টাকা, দক্ষিণ ভরতের ছড়া সপ্রা বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা, ২ নং পাইকেরছড়া সপ্রা বিদ্যালয়ে ১ লাখ টাকা ও চর- ভূরুঙ্গামারী সপ্রা বিদ্যালয়ের নামে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, শুধু বন্যা নয়, যে কোনো উন্নয়ন বরাদ্দ এলে কিছু তেলবাজ ও দালাল প্রধান শিক্ষকের দেয়া তালিকা কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই আবেদন পাস করে বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেয় শিক্ষা অফিস। পরবর্তীতে ওই প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগাভাগি করে নামকাওয়াস্তে কাজ করে সবাই মিলে সরকারি টাকা লোপাট করেন।

শিক্ষকরা আরো জানান, যে কোনো দুর্যোগের পর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চাওয়া হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে প্রতি বারেরমতো তাদের অনুগত শিক্ষকদের স্কুলের তালিকা পাঠান। বাস্তবে যেগুলোর অধিকাংশতেই কোনো ক্ষয়ক্ষতিই হয়নি। বন্যা এলাকা থেকে পশ্চিম বেলদহ সরকারি বিদ্যালয়টি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।

সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক এই প্রতিবেদককে জানায়, আমাদের বিদ্যালয়টি উঁচু এলাকায়। এখানে কোনো বন্যা হয়নি। ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অথচ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে ১ লাখ টাকার বরাদ্দ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফায়েল হোসেন জানান, বন্যার পানিতে স্কুলের টয়লেটের টাংকি নষ্ট হয়েছে।

সরেজমিন দক্ষিণ চর বাড়ুইটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের দেখা মেলেনি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন খুঁজে হয়রান হওয়ার পর এলাকাবাসী জানান, পানি বিদ্যালয়ের মাঠে উঠেছিল; কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির মতো বন্যা হয়নি। পুরাতন টিনশেডের ঘরের মেঝে আগে থেকেই ভাঙা ছিল। সেটিকেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে অফিসের যোগসাজসে বিদ্যালয়ের নামে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ এনেছেন প্রধান শিক্ষক।

অথচ এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা এবিষয়ে কিছুই জানেন না। এর আগেও ক্ষুদ্র মেরামতের, স্লিপের টাকা বরাদ্দ নিলেও কোনো মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন জানান, বন্যার পানি বিদ্যালয়ে ঢুকেছিল মৌখিকভাবে অফিসকে জানিয়েছি। বরাদ্দ আসার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার আখতারুল ইসলাম বলেন, আমি তিনদিনের প্রশিক্ষণে ঢাকায় আছি। এটিওদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের বিষয়ে পরে জানাতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত