অনভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট আর মানহীন যন্ত্রপাতি, সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সবকিছু মিলে মানুষের জীবন নিয়ে সেবার নামে চলছে তেলেসমাতি। সরকার অনুমোদন ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল বিধিমালার পাতা উল্টিয়ে রেখে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বাহুবলে শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে অবাধে চলছে ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকের নামে অপব্যবসা। যদিও এ ব্যাপারে বারবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশ জুড়ে বেনামী ক্লিনিক ও মানহীন ডায়াগনস্টিকের মত অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কর্তাদের হস্তক্ষেপে হানা দিলেও স্থায়ীভাবে সুষ্ঠু কোনো প্রতিকার তো হচ্ছেই না বরং দিন দিন অদৃশ্য অপশক্তির আচ্ছাদনে বেড়েই চলেছে এই সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান, আর তা নিয়ে জনগণের মনে বাসা বেঁধেছে নানান প্রশ্ন। পাশাপাশি শ্যামনগরের মহল্লাভিত্তিক ফ্ল্যাট বাড়িভাড়া নিয়ে দৃষ্টিনন্দন সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের নামিদামি ডাক্তারদের ম্যানেজ করে তাদের নামের তালিকা টাঙিয়ে সিন্ডিকেট দালালদের সহযোগিতায় প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রাম থেকে আসা অসহায় রোগীদের কৌশলগতভাবে লাইসেন্সবিহীন বেনামী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করে অজানা উদ্ভট অসুখের কথা বলে অন্য কোনো হাসপাতাল থেকে কিছু সময়ের জন্য একজন চিকিৎসক হাজির করে দায়সারাভাবে রোগী দেখে যাওয়ার পরপরই বিভিন্ন রোগের সিমটম এর উপর ভিত্তি করে নানান ধরনের টেস্ট করার অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে ওই সকল অসহায় রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা। আর ওই সকল টেস্টগুলো লাইসেন্সবিহীন বেনামি অনভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট দ্বারা টেস্ট করানোর কারণে সঠিক রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে রোগী সঠিক চিকিৎসা তো পাচ্ছেই না বরং এতে রোগী সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা উপরন্ত দিন দিন শারীরিকভাবে অবনতি হওয়ায় কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে রোগীর স্বজনরা সেখান থেকে স্থানান্তর করে নিতে চাইলেও ক্লিনিক মালিক নিজেই চিকিৎসক সেজে কৌশলগতভাবে আরো ভালো ডাক্তার কল করে এনে চিকিৎসা দেওয়ার সান্তনা বাণী শুনিয়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের জীবন নিয়ে খেলছে নিকৃষ্ট খেলা।ক্লিনিকে সিজারের রোগী পেলে চুক্তি করে সিজার করার পর রোগীর অভিভাবকদের বলা হচ্ছে, রোগীর জরায়ুতে টিউমার বা এ্যাপেন্ডিস রয়েছে তা রা কাটলে ফেটে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে আবার অপারেশন করতে হবে।
রোগীর অভিভাবকরা ভয় পেয়ে নতুন চুক্তি করে আবার সেই অপারেশনে রাজী হচ্ছে তাতে নেওয়া হচ্ছে মোট অংকের টাকা।রোগী এলে পরিক্ষার জন্য প্যাথলজিতে পাঠানো হচ্ছে এবং বলে দেয়া হচ্ছে বাচ্চার ওজন যাই থাকুক ২৫০০ গ্রাম করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য। ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কথা মতো ২৫০০ গ্রাম করে রিপোর্ট দিচ্ছে। ওজন পরিমিত না হওয়ায় সিজার করায় মা ও শিশু বিভিন্ন রোগে ভুগতে দেখা যাচ্ছে।
শ্যামনগরের বেশ কিছু অবৈধ ক্লিনিক এর ব্যাপারে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানে অবৈধভাবে গর্ভপাত করিয়ে নেক্কারজনক কাজের সাথে লিপ্ত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট জানান আমি ভ্রাম্যমাণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট র্যাব পুলিশসহ লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও মানহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ ক্লিনিক জরিমানা ও সিলগালা করে বন্ধ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পুনরায় কোনো অজানা শক্তির বলে বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসা। তিনি আরো বলেন আমার জানামতে শ্যামনগর উপজেলার শহর ও গ্রামে ২৫টি ক্লিনিক হাসপাতাল (ক্লিনিক) ও ৫০টির ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, তার মধ্য ২০২৪ সাল নাগাদ লাইসেন্স নবায়ন করার আবেদন হিয়েছে শুনেছি। নবায়নন ছাড়াই খেয়ালখুশি মতো চলছে পাশাপাশি একেবারে লাইসেন্সবিহীন ডায়াগনস্টিক-এর সংখ্যা রয়েছে ৫০টির মতো।
তবে আমাদের পক্ষ থেকে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক-এর বিরুদ্ধে কঠিন তদারকি বহাল থাকলেও কোথাও যেন থেকে যাচ্ছে গোপনের গড়িমসি। তবে কোনো অপশক্তি যদি অন্তরালে থেকে এদের হয়ে ছায়া শক্তি হিসেবে কাজ করে যেকোনো পন্থায় তাদেরও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে বের করা হবে। অপরদিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্স ও অনুমোদনবিহীন চলছে শ্যামনগরের স্বনামধন্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর নাম। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন সুস্পষ্টভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যেসব ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধিমালার পরিপন্থি এবং লাইসেন্সবিহীন অনুমোদন ছাড়া নিজ গতিতে চলছে, সেগুলো অচিরেই বন্ধ করে দেয়া হবে। পাশাপাশি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল বিধান মেনে চলতে হবে এবং অভিজ্ঞসম্পন্ন নার্স-ডাক্তার সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত রাখতে হবে। অন্যথায় ওই সকল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।