যশোরের কেশবপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক কর্মচারীরা অপসারণ আতঙ্কে রয়েছেন। রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার পর আন্দোলনের নামে ঐতিহ্যবাহী কেশবপুর বাহারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে জোরপূর্বক অপসারণ করানোর ঘটনায় এ আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার ৭২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিগত ১৫ বছরে মোটা অংকের টাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময়ের ভেতর যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে যারা এমপি ছিলেন, তারা শত শত কোটি টাকা শিক্ষা বাণিজ্য করেছেন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথেই এসব শিক্ষা বাণিজ্যের সমস্ত দায়ভার এখন পড়ছে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ দলবাজ শিক্ষক কর্মচারীদের ঘাড়েই। আগামীতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছেন তারা। বিশেষ করে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, শিক্ষা বাণিজ্যসহ আওয়ামী লীগের দখলবাজগিরির সাথে যারা জড়িত তাদের মাঝেই উৎকণ্ঠা বেশি কাজ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আবার অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ঠিকমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন না। এছাড়া, যে সমস্ত শিক্ষকদের শিক্ষা সনদপত্র নকল বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে তারাও বেশি উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১ আগস্ট দুপুরে কেশবপুর শহরের বাহারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের সহয়োগিতায় ‘এক দফা এক দাবি ফসিয়ারের পদত্যাগ’ স্লোগানে অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করে। এ সময় তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন অধ্যক্ষ ফসিয়ার রহমান। পদত্যাগপত্রে তিনি একান্ত ব্যক্তিগত বিশেষ অসুবিধার কথা উল্লেখ করলেও মূলত তিনি বাধ্য হন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে।
এ ব্যাপারে সাগরদাঁড়ি মাইকেল মধুসূদন ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার চৌধুরী বলেন, শিক্ষা বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে অপসারণ আতঙ্কে তার মতো উপজেলার কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কাকিলাখালি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সাগরদাঁড়ি দাখিল মাদ্রাসা, সাগরদাঁড়ি কারিগরী বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়, নতুন মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যলয়সহ অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা রয়েছেন। বেগমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন মন্ডল হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় তার অফিসের নামের সাইন বোর্ডটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এলাকার একটি স্বার্থাম্বেষী মহল কতিপয় শিক্ষকদের দ্বারা আদিষ্ট হয়ে এসব করছে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, তিনি হিন্দু শিক্ষক হওয়ায় ওই স্বার্থাম্বেষী মহল ৬ মাস ধরে তার বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রশিদ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগের কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটি এখন আর নেই। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা সমস্যায় পড়লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে।