কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

অফিস সহকারী ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক এইচএম সুমন বিল্লাহ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুজন সাহার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের দুজনের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

যার অনুলিপি প্রেসক্লাবে দেয়া হয়। অভিযোগের সূত্র ধরে স্থানীয় লোকের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সুমন ও সুজন সাহা যেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোড়ল। তাদের দুজনের কাছে অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জিম্মি হয়ে পড়ায় অধিকাংশ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কারণ দেখিয়ে এখান থেকে সটকে পড়েন। এছাড়া যারা আছেন তাদের ন্যায্য পাওনা ঠিক মতো পায় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রধান সহকারী সুমন ২০১০ সালে অফিস সহকরী পদে কাউখালীতে যোগদান করে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, অডিটসহ নানা খাতের অর্থ আত্মসাৎ, মা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার কাউখালী, পিরোজপুরের নার্সের সাথে অবৈধ ও অনৈতিক সম্পর্ক ওঠার অভিযোগ তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ছিদ্দীকুর রহমান তাকে বদলি করে নাজিরপুর প্রেরণ করেন।

নাজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকাকালীন অবৈধ আঁতাতের মাধ্যমে প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর নানা খাতের অর্থ আত্মসাৎ, নার্সের সাথে অবৈধ সম্পর্ক প্রভৃতি কারণে সেখান থেকে তাকে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। এরপর বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসৎ কর্মকর্তা মাধ্যমে সুমন ২০২২ সালে একই সাথে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন।

প্রধান সহকারী সুমন ইতিমধ্যে পিরোজপুরের পাল পাড়ায় জমি ক্রয় করে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ৪ তলা বাড়ি করেছেন। তাদের অনিয়ম ও দুনীর্তির মধ্যে রয়েছে, ঠিকাদারের সাথে অবৈধ যোগাযোগের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরোনো ভবন নিলামে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে ৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমা দেয়। অথচ কাগজে কলমে ওই টাকা দেখালেও তারা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করণের কাজ ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রভাবশালী নেতা নানকের আত্মীয় নুরই এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করে ১৪ সালে কাজ ফেলে চলে যান। এ সময় তাদের ফেলে যাওয়া প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার রড যা নার্স ডরমেটরির সামনে রাখা ছিলো। তা বিক্রয় করে সব টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রধান সহকারী সুমনের বন্ধু পিরোজপুরের মোহাম্মাদী প্রেসের লাইসেন্স দিয়ে স্টেশনারী টেন্ডার দিয়ে প্রতিবছর তার খেয়াল খুশিমতো ৫ টাকার মাল ১০-১২ টাকা ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাখ সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেন। অফিসের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বাৎসরিক পোশাক ভাতার ৫০ শতাংশ, সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতার ১০ শতাংশ, ভ্রমণ ভাতার ৫০ শতাংশ, জুন মাসে ভুয়া ভ্রমণ বিল করে যাহার ৭০ শতাংশসহ সকল খাতের বরাদ্দ থেকে অর্ধেক পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে ধলু মালী ৫০ শতাংশ অর্থ দিতে রাজি না হওয়ায় ধলু মালীকে পোশাক ভাতা প্রদান করা হয়নি। বনজ বাগান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার, যন্ত্রপাতি মেরামতসহ এ জাতীয় সব বরাদ্দের ভুয়া বিল ভাউচার করে সকল টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর ওষুধ ক্রয়ের জন্য টেন্ডার দেয়া হলেও অধিকাংশ সময় ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে অর্ধেক পরিমাণ ওষুধ গ্রহণ করে বাকি টাকার ওষুধ কাগজ-কলমে গ্রহণ দেখিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে নগদ অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। তবে জরুরি পরিদর্শনে দেখানোর জন্য সকল প্রকার ওষুধ কিছু স্টোরে জমা রাখেন। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে প্রশিক্ষণ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় না এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারী সুমন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সকলকে জিম্মি করে রাখায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রোগীকে সেবা না দিয়ে অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। যা কয়েকবার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জন রোগী আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকলেও নিয়মিত গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী ভর্তি দেখিয়ে ঠিকাদারের সাথে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে।

এমতাবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রধান সহকারীকে অন্যত্র বদলি করে উপরে উল্লেখিত অভিযোগসমূহ তদন্ত করলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে ওই লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে। এদের ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সম্প্রতি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য সহকর্মী ও অন্যান্য কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগসহ মানববন্ধন কর্মবিরতি পালন করলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরেও বহল তবিয়তে আছেন এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস সহকারী সুমন বিল্লাহর মুঠো ফোনে বারবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুজন সাহার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে হাসাপাতালে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, মুঠোফোনে কথা বলা যাবে না আপনি অফিসে আসেন।