বছরে ৪ মাস বন্যার পানিতে ভাসে মানুষ

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কামরুল ইসলাম আমির, ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ)

ময়মনসিংহের পিছিয়েপড়া প্রত্যন্ত উপজেলা ধোবাউড়া। সেই ধোবাউড়ার সবচেয়ে অবহেলিত ইউনিয়ন পোড়াকান্দুলিয়া। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটরি দূরে অবস্থিত এই ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সটি।

২৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ইউনিয়নটির অভ্যন্তরে এক ফুট রাস্তাও পাকা নেই। উপজেলা সদর থেকে আন্তঃউপজেলা সংযোগ সড়কটিও পাকাকরণ হয়েছে প্রায় ২০ বছর পূর্বে। এরপর আর কোনো রাস্তা পাকাকরণ করা হয়নি। এরপর আর লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। সাতাশটি গ্রামের অভ্যন্তরে গ্রামীণ রাস্তাগুলো এতটাই বেহাল যে, বর্ষাকালে হাঁটু পরিমাণ কাদা থাকে।

আর পানিতো নিত্যদিনের সঙ্গী। সবমিলে সাতাশ গ্রামে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রামীণ লোকজন। সবচেয়ে বেশি জনদুর্ভোগে থাকা গ্রামগুলো হলো বতিহালা, রাউতি, বেতগাছিয়া, বহরভিটা, হরিণধরা, উদয়পুর, রায়কান্দুলিয়া, ঘুঙ্গিয়াজুড়ি, চড়ের ভিটা, টেগরিয়া, কাউয়ারকান্দাসহ আরো কয়েকটি গ্রাম। এই গ্রামগুলোতে চলার মতো ভালো মানের মাটির রাস্তাও নেই। নেই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পোড়াকান্দুলিয়া সদর বাজারে একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং বতিহালা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে। এই দুটি স্কুল থেকে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। রাস্তা না থাকায় এসব গ্রামের শিশুরা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে। বছরের ৪ মাস বন্যার পানিতে ভাসে এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় বছরে একটিমাত্র ফসল বোরো ধানের উপর নির্ভর করতে হয় সাধারণ মানুষের। যার ফলে অর্থনৈতিক দৈন্যদশার মধ্যে ঘুরপাক খায় মানুষ। এই ইউনিয়নটিতে অদৃশ্য কারণে কোনো এনজিও কাজ করেনি। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ৩ দশক ধরে সরকার পরিবার এবং তালুকদার পরিবার এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর পরিবার এবং সাবেক চেয়ারম্যান আ. হাই তালুকদার। পরবর্তীতে স্বপন তালুকদার নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বপন তালুকদারের ভাই রিপন তালুকদার বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে পরাজিত হয়েছেন। দুটি পরিবারের দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকলেও ভাগ্য বদলায়নি সাধারণ মানুষের। রাউতি গ্রামের মারফত আলী বলেন, জন্মের পর থেকেই কষ্ট করে চলছি, আমাদের কোনো রাস্তাঘাট নেই, আমাদের মতো এত দুর্ভোগ ধোবাউড়ার কোনো মানুষ করেনি। বেতগাছিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন জানান, আমাদের একটা ভালো রাস্তাও নেই। কোনো যানবাহন চলে না। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালেও নিতে পারি না। গতকাল বিকালে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দুধনই টু রাউতি রাস্তায় দেখা যায় সাইদুল ইসলাম নামে এক পথচারী ধান কাঁধে নিয়ে রাস্থার ভাঙা অংশ পার হচ্ছেন। এসময় তিনি বলেন, এমন রাস্তা দেশে কোথায় আছে কি না জানা নেই। এ ব্যাপারে পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল হক বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, আমার সময়টা বিরোধী সরকারের সময় গিয়েছে তাই প্রত্যাশিত কাজ হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নে বড় কোনো মাটির রাস্তা নেই, চেয়ারম্যান সাহেব আগে মাটির রাস্তা করতে হবে তারপর আমরা পাকা করতে পারব, একটি রাস্তা করা হয়েছে সেটি পাকাকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।