ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বন্যায় ফটিকছড়ি ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

বন্যায় ফটিকছড়ি ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর বন্যার তাণ্ডবের ক্ষত চিহ্ন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের ক্ষত বেরিয়ে পড়েছে। ধসে পড়েছে কাঁচা ও মাটির ঘর। নষ্ট হয়েছে নিমজ্জিত ঘরবাড়ির অনেক আসবাবপত্র। দেখা দিয়েছে গ্রামীণ সড়কে কালভার্টের দুই পাশে বড় বড় গর্ত। গ্রামের ছোট ছোট অনেক রাস্তা যেন অস্তিত্বহীন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিজেদের বাড়িঘরের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অনেকে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে ঘরের মেঝেতে পা ফেলতে গেলে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যাচ্ছে। বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের বাড়িতে পালন করা হাঁস-মুরগিও মারা গেছে। উপজেলাজুড়ে আমনের বীজতলা ও সবজিখেত্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টি পাত কম হওয়ায় হালদানদী ও ধুরুং, লেলাং, মানাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি , সর্তা ও তেলপারাই খালের পানি কমতে শুরু করে। এর আগে কয়েকদিনের টানা ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এসব নদী ও খালে পাড় একাদিক স্থানে ভেঙে পানি ঢুকে ফটিকছড়ির বাগান বাজার, দাঁতমারা, নারায়নহাট, ভূজপুর, পাইদং, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, রোসাংগিরী, নানুপুর, লেলাং, বক্তপুর, ধর্মপুর, সমিতিরহাট, জাফতনগর, আব্দুলাহপুর ইউনিয়নে তাণ্ডব চালায়। এছাড়া ফটিকছড়ি পৌরসভা ও নাজিরহাট পৌরসভার অধিকাংশ জায়গায় তান্ডব চালিয়েছে এ বন্যা। এসব এলাকায় লাখো মানুষ পানি বন্ধি ছিল। বন্যার পানিতে গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট- সমিতিরহাট- আজাদীবাজার সড়ক, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে পানি সরে যাওয়ায় স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।

এদিকে বানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বৃত্তবানরা। তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী। বন্যাকালীন সময়ে উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে সব কিছু সরেজমিনে থেকেই ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। আয়তনের দিকে মালদ্বীপের দেশের তুলনায় এত বড় উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার এক অভিজ্ঞতার কথা বলে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ৫০ বছরেও এঞ্চলের মানুষ এমন বন্যা দেখেনি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর মেরামত ও পুনর্বাসন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ভয়াবহ এ বন্যায় ১৮ ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার। বন্যায় আংশিক ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৭ হাজার ২ শতটি এবং সম্পূর্ণ ৬ শতটি। তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ২০ জন। ৬ হাজার ৫ শত জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। ৩০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়েছে। ১০ হাজার মানুষকে রান্না খাবার দেয়া হয়েছে। ২ হাজার মানুষকে পোশাক (শাড়ি-লুঙ্গি) দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার ওরস্যালাইন দেয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাভলেট দেয়া হয়েছে ১০ হাজার পিচ। এ পর্যন্ত প্রাণিসম্পদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ শত ৫৬টি হাঁস-মুরগি ৪১ হাজার ৭ শতটি। মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে সম্পূর্ণ পুকুর ৩ হাজার ১২টি, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৫৩০টি পুকুর। বৈদ্যুতিক ক্ষতি হয়েছ ২৪টি ট্রান্সফর্মার, ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, ১ শত মিটার লাইন তার নষ্ট হয়েছে, মোট ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন ৭.২ কিলোমিটার।

এছাড়া ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ’র মতে বন্যায় আনুমানিক ২২ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ২৬৮ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক, ৩০ টি ব্রিজ, ১২০ টি বক্স কালভার্ট, ৭৪টি স্লাব কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক ও কালভার্ট।

তিনি বলেন- কৃষি জমিতে আমন ধানের চারার ক্ষতি হয়েছে। এ মুহূর্তে বীজ সংকট আছে। সে বিষযে আমরা বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছি। বীজ সরবরাহ জন্য চেষ্টা করব। যারা কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

ইউএনও মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরো বলেন- পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে আমরা একটা বাজেট চাইব, পাশাপাশি আমাদের অনেক ব্যক্তি স্বপ্রণোদিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের একটি ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। সেই আর্থিক সহযোগিতারও আমরা হিসাব রাখছি। যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তাদের সহযোগিতা করব। এছাড়া বিভিন্ন মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করা জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন প্রত্যকটি ইউনিয়নে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা প্রণয়ন করছি। সেই তালিকা থেকে এসব মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা নিতে পারেন। তিনি বলেন- এ মুহূর্তে খাদ্যের অভাব আছে এ রকম কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ আছে বিভিন্ন জায়গায় ঘর ধসে পড়েছে। সরকারিভাবে সময় লাগে তাই বিত্তবানদের প্রতি আহবান যে ঘরগুলো একেবারে ধসে গেছে ওই ঘরগুলো করে দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন- সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ঘরে মধ্যে প্রায় ২৫০টি ঘর করে দেবার চেষ্টা করব। সেই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। তাছাড়া কারিতাস প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে, তারা বলেছে ২০০ ঘর সম্পূর্ণ নির্মাণ করে দেবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত