প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আইরন জয়কুল মোদাসসের মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নান্না মিয়ার পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল চালায়। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক সচিব ও মন্ত্রী মরহুম এম এ মতিউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত আইরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নান্না মিয়া এই স্কুলে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও যৌন হয়রানির বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠনসহ নানা কারণে তার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা হয়। এরপরেও আইনের ফাকফোঁকর থেকে বারবার বেরিয়ে এসে একই অপরাধ করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় ক্যাডার ও সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগিতায় তিনি তার অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এলাকার সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী অভিভাবক তার বিভিন্ন অনিয়ম হয়রানির বিষয় মুখ খুলতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহ ধরে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে স্কুল কমিটির বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি স্কুল পরিদর্শন করে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফিরানোর বারবার চেষ্টা করলেও ছাত্রছাত্রীরা এক দফা এক দাবি প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ এই আন্দোলনে অনর থাকেন। দিন দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার বিকালে স্থানীয় বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবিরকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রছাত্রী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক ও ছাত্র অভিভাবকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। এ সময় স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ। প্রধান শিক্ষক বিরুদ্ধে ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানির বিবরণ তুলে ধরেন, ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন ২ বছর পর্যন্ত স্কুলে কোন উপবৃত্তির আবেদন করা হয়নি, প্রধান শিক্ষক স্কুলে নিয়মিত আসেন না, ক্লাসে শার্ট খুলে চেয়ারে বসেন। মেয়েদের স্পর্শকাতরার স্থানে হাত দেন এবং বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গিমার মাধ্যমে ছাত্রীদের ইভটিজিং করেন। এছাড়াও তারা অভিযোগ করে বলেন প্রধান শিক্ষক স্কুলকক্ষে ধূমপান করেন, ফরম ফিলাপ, রেজিস্ট্রেশনপত্র, প্রশংসাপত্রসহ ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়া অথবা ঠিক করার জন্য তার কাছে গেলে সরকারি বিধিবিধান না মেনে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ করেন তারা। এ সময় ছাত্রছাত্রীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন। তদন্তকালীন সময় সহকারী প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ন্যায়বিচার করা হবে মর্মে আশ্বস্ত করলে ছাত্র-ছাত্রীরা এক সপ্তাহ ক্লাস বর্জনের পর গত বুধবার আবার ক্লাসে ফেরেন। এছাড়া ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগের কর্মস্থলে স্কুলে ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে স্কুল এলাকা ত্যাগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।