নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনুর মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। একটি জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে তার বিবাদের জের ধরে আনু তার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ সংলগ্ন মাসদাইর আদর্শ স্কুল রোডে হেলেনা কটেজ নামে একটি বহুতল ভবনের ৯ তলায় ভাড়া থাকতেন। তার স্ত্রী চার বছর আগেই ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। কিন্তু গত ২৬ আগস্ট দুপুরে ছেলে-মেয়েকে দুপুরের খাবার রেডি করতে বলে হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। ওই দিন আনোয়ার হোসেন আনুর আচরণ ছিল এলোমেলো। তার অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেন মেয়ে প্রেরণা। পরে তাকে কফিও বানিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ে। কফি দিয়ে প্রেরণা তার নিজ রুমে চলে যান। কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন আনু ঘরে নেই, মূল দরজা খোলা। পরে তিনি তার বাবার মুঠোফোনে কল করলে সেটি ঘরেই আবিষ্কার করেন। ওইদিন বিকালে আনুর ওই ভাড়া বাসায় লিটফের নিচে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিতার শোকে পাথর মেয়ে জান্নাত আরা জাহান প্রেরণা ও ছেলে সারিদ হোসেনকে তার বাবার মরদেহটিও দেখতে দেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তড়িঘরি করে আনুর বড় ভাই হাজী আবুল কাশেম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ না করে উল্টো তার বাসা থেকে আনুর মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা ৬০-৭০ ভরি স্বর্ণের গহণা, নগদ ২০-২৫ লাখ টাকা ও তার ব্যক্তিগত গাড়িটি নিয়ে চলে যান আনুর ভাইয়েরা। এ সময় মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ছুটে আসা আনুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও তার ছেলে-মেয়েকে একটি কক্ষে আটক রেখে আনুর ভাইয়েরা মিলে পিটাতে থাকে। পিটিয়ে তাদের স্বীকার করানোর চেষ্টা করে যে, তারাই আনুকে হত্যা করেছে। পুলিশে খবর না দিয়ে তারা আগে সোনা-গয়না ও গাড়ি হাতিয়ে নিয়ে পরে যায় থানায় মামলা করতে। যেখানে তখনো পুলশ কিংবা চিকৎসক নিশ্চিত হতে পারেননি- এটা মৃত্যু না হত্যাকাণ্ড, সেখানে তারা তার শোকাহত ছেলে-মেয়েকে ধরে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়ার চেষ্টা করছে হত্যাকারী হিসেবে। আনুর ছেলে সারিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাবার লাশ দেখতে না দিয়ে আমাকে ও আমার বোন প্রেরণাকে মারধর শুরু করেন স্বজনরা। ৩৩ শতাংশ একটি জমি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই বাবার বিরোধ ছিল। জমিটি বাবা আমাকে এবং বোনের নামে লিখে দিয়েছেন। আমরা আরো অবাক হয়েছি, বাবার রহস্যজনক মৃত্যুর পর লাশটি পর্যন্ত আমাদের দেখতে দেননি চাচারা। আগে থেকেই মামলার এজাহার লেখা ছিল। আমাদের পিটিয়ে থানায় নিয়ে পিতার হত্যাকারী বলে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। আমি আমার বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। এদিকে, আনুর লাশ উদ্ধার করে গত ২৬ আগস্ট ভিক্টরিয়া হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. এসকে ফরহাদ বলেন, আনোয়ার হোসেন আনুর মরদেহে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা মরদেহের ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে এটি হত্যাকাণ্ড নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু। ফতুল্লা থানার ওসি নূরে আজম মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ২৬ আগস্ট বিকালে ৭ জনকে ধরে এনে আনু হত্যা মামলার আসামি হিসেবে থানায় সোপর্দ করে। এটি হত্যাকাণ্ড নাকি মৃত্যু এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা আনুর ছেলেমেয়েসহ ৫ জনকে কারাগারে প্রেরণ করেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্বাভাবিক মৃত্যুর প্রমাণ পেলে অবশ্য নিরপরাধ হিসেবে ছাড়া পারেন আদালত থেকে। এদিকে আনুর মৃত্যুর পরই তার ভাইয়েরা গেছেন তার ৩৩ শতাংশের বাড়িটি দখল করতে। সেখানকার ভাড়াটিয়াদের বলে এসেছেন এখন থেকে বাড়ির ভাড়া তাদের দিতে। সব কিছু মিলিয়ে যুবদল এই নেতারমৃত্যু নিয়ে এলাকাবাসীর মনেও নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। তাদের দাবি, পুলিশের উচিত আনুর ভাইদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা।