বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বেড়েছে দুর্ভোগ

ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৪০ কোটি

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মানিকভূঁইয়া, নোায়াখালী

বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে সপরিবারে আশ্রয় নেয়া চৌমুহনী পৌরসভার গনিপুর গ্রামের রেজাউল হক (৬০) কান্নায় ভেঙে বলেন বসতঘর নিলো বন্যায়, পিকআপটা নিলো চোরে। তিনি বলেন বন্যায় বাড়ির ঘরটি পানিতে ডুবে গেলে কোনো মতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিলে মিশে নিজের মালিকিয় পিকআপে করে ত্রাণ সহায়তায় কাজ করছিলেন। গত সোমবার কাজ শেষে রাতে স্কুল গেইটে গাড়িটা রেখে ঘুমাতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন গাড়িটি নাই। খোজাখুজি করে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম পিকআপটি আর পান নি। পার্শ্ববর্তী একটি সিসি ক্যামরায় দেখা গেল রাত ২টা ৪১ মিনিটে পিকআপটি চুরি করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। এ ঘটনায় গত ২৯ আগস্ট বেগমগঞ্জ মডেল থানায় অভিযোগ করেছে। তিনি আরো বলেন গত এক বছর আগে ১০ লাখ টাকায় গাড়িটি কিস্তিতে কিনেন। এখনো তার তিন লাখ টাকা বকেয়া। এ গাড়ি ছাড়া উপার্জনের আর কোনো পথ নেই। সবাই মিলে তার গাড়ি টি উদ্ধার করে তার পাশে দাঁড়াতে তিনি সবার কাছে অনুরোধ করেন।

বন্যা আর চোর তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। গত ২১ আগস্ট পরিবার নিয়ে বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রের পাঁচতলায় উঠে। তার পিকআপটির নম্বর (চট্ট মেট্রো-ন-১১-৯২৮১)। তিনি কেঁদে কেঁদে আরো বলেন, ‘গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসি। তাই এ বন্যায় লোকজনের সাহায্যের জন্য বিনা ভাড়ায় ত্রাণ কার্যক্রমে গাড়ি সরবরাহ করে আসছিলাম। তেলের টাকাও নিজের পকেট থেকে দিচ্ছি।’ বেগমগঞ্জ মডেল থানার কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, পিকআপ চুরির অভিযোগ পেয়েছে।

গাড়ি উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। হানিফ কামাল জানালেন, নিজের ঘরে ৩ ফুটের বেশি পানি হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বাড়ির একজনের বিল্ডিংয়ের ছাদে ছিলাম পরিবার পরিজন নিয়ে। আপনাদের ত্রাণ সহায়তায় মোটামুটি দিন কেটে গেছে। এখন পানি কমতেছে। ঘরদোর কি দিয়ে ঠিক করবো, ভাড়ায় দেয়া রিকশাগুলি পানিতে নষ্ট হয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেগুলি মেরামত করার টাকা কোথায় পাবো- দুশ্চিন্তায় ঘুম আসে না। আলাপ করে জানা গেলো, বিডিআরের অবসর প্রাপ্ত সৈনিক হানিফ অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই থাকে। বড় মেয়ে ঢাকা জগন্নাত কলেজে পড়ে। হানিফের পেনশনের টাকায় কয়েকটা পুরানো রিকশা কিনে ভাড়ায় চালিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে সংসার চালাতো। বন্যায় তাকে দিশেহারা করে দিয়েছে।

উপজেলার গ্রাম গঞ্জের ঘরদোরে পানির কারনে নষ্ট হওয়া বেড়াগুলি ভেঙে চুরির ভয়ে আতংকে সাধারন মধ্য বিত্ত পরিবার। পানি থাকা কালে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন, তাদের কারো কারো বাড়িতে চোর ঢুকেছে এমন সংবাদ মসজিদ মাইকে প্রচার করায় চোরের দল তেমন ক্ষতি করতে পারনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা অবস্থা উদ্বেগ জনক। বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমানের ১৬টি ইউনিয়ন বিভিন্ন স্থানে, বন্যায় মোটামুটি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পাওয়া গেছি। তবে উপজেলা ভিত্তিক সমন্বয়ের অভাবে কিছু সমস্যা হয়েছে।

বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় বিত্তবানদের সহযোগীতা খুবই জরুরি। প্রকল্প বাস্তবায় কর্মকর্তা আহাম্মদ উল্লা সবুজ জানান, তার অফিসের লোকবল সমস্যা নিয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২৫টি পরিবারে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৩০০ জন ক্ষতি গ্রস্থ মানুষের মাঝে সরকারি, ২৭০ মে. টন চাল ও ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা চোখে পড়ার মতো। তবে এ কাজে পরিবহন সমস্যার কারণে যথেষ্ট অসুবিধা হয়েছে। কৃষি অফিসের ফজলে এলাহীর তথ্য মতে প্রায় ৯ কোটি টাকার আউস আমন শাকসবজি মশলার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য অফিসার মাসুমা আক্তারের মতে প্রায় ১৬ কোটি টাকার মাছ এবং প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা শাহ পরান মতে ১৫ কোটি টাকার প্রাণিজসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

সরকারি ভাবে সহযোগিতা না ফেলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করে। এদিকে উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার জানান বন্যা জনিত কারনে প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। যা দিন দিন বাড়বে। গ্রাম এলাকাসহ রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে ডাক্তার সমস্যা না থাকলেও কলেরা স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধ করণ টেবলেটসহ প্রাসঙ্গিক ঔষধের বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

অন্য দিকে গেল পনের দিনে বেগমগঞ্জ উপজেলা ও প্রথম শ্রেণি চৌমুহনী পৌরসভা গত দু সপ্তাহ ব্যাপী প্রায় শতাধিক স্থানে কোটি টাকা ত্রাণ ও খাদ্যসহ নানাবিধ সামগ্রী উপহার ও বিতরণ করেন। বেগমগঞ্জ আসনের চার বারে সাবেক এমপি ও মন্ত্রী বরকত উল্যাহ। এ সময় তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলায় ও জেলা বিএনপি অংঙ্গ সংঘটনের নেতারা।