হাট-বাজারে বাড়তি টোল আদায়
প্রশাসন নির্বিকার
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আইয়ুব আলী, শেরপুর (বগুড়া)
বগুড়ার শেরপুরে পৌরসভাসহ দশটি ইউনিয়নে ১৯টি হাট-বাজার রয়েছে। এসব হাট-বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বাড়তি খাজনা (টোল) আদায় করা হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে ইজারাদার ও তাদের নিয়োগ করা লোকজন ইচ্ছেমতো খাজনার নামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি খাজনার (টোল) হার পণ্যপ্রতি বড় ব্যানারে প্রকাশ্যে হাট-বাজারগুলোতে টানানোর নিয়ম থাকলেও এই উপজেলার সিংহভাগ হাটে সেটি করা হয়নি। তাই পণ্যের নির্ধারিত খাজনার হার সম্পর্কে কিছুই জানেন না সাধারণ মানুষ। তাদের অন্ধকারে রেখে ইজারাদার ও তাদের লোকজন নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে খাজনার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার জামাইল ও রানীরহাটে সরেজমিনে গেলে সত্যতাও মেলে। দেখা যায়, আশি কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ধানে নির্ধারিত খাজনা ষোল টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে বাইশ টাকা। একই ভাবে পঞ্চাশ কেজি মাছের জন্য বিশ টাকার স্থলে ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ টাকা এবং এক ডালি মাছের জন্য দশ টাকার স্থলে পঞ্চাশ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ সময় কথা হয় ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক, আব্দুল আলীম, সোলায়মান আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা অভিযোগ করে বলেন, হাটে আসা ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছে থেকেই খাজনা নেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত খাজনার হার। এ ছাড়া সপ্তাহের দুইদিন (হাটবার) খাজনা নেয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিনই খাজনার নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। সবজি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ফুলবাড়ী বাজার থেকে এক মণ সবজি কিনলে খাজনা দিতে হয় চল্লিশ টাকা আর বিক্রেতাকে দিতে হয় বিশ টাকা। যা সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। চাতাল ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী, আব্দুস সালাম বলেন, শেরপুর আলীয়া মাদ্রাসা এলাকায় বারোদুয়ারি হাটের দিন সকালে ধান বেচাকেনা হয়। এখানে প্রতিমণ ধানের খাজনা নেয়া হয় আঠাশ থেকে ত্রিশ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দ্বিগুণ হারে খাজনা নেয়া হচ্ছে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না চাইলে মারধরের শিকার হন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি হাটে বসতে দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন। তাদের দাবি, হাটে সরকার নির্ধারিত টোল নির্ধারণ করা কোনো চার্ট না থাকায় সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই খাজনা আদায়কারীদের দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া বাড়তি টোলের কোনো রশিদ দেয়া হয় না বলেও দাবি করেন। জানতে চাইলে জামাইল হাটের ইজাদারের আদায়কারী বক্স মিয়া বাড়তি টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, এই হাট ইজারায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে। তাই সেই টাকাতো তুলতে হবে। এ জন্য একটু বেশি নেয়া হয়। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত খাজনার চার্ট বা ব্যানার উন্মুক্ত স্থানে ইজারাদাররা টানায় না, এটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানানোর কথা বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে খাজনার নামে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের ঘটনার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন ছাত্র-জনতা। এরই মধ্যে চাঁদাবাজি রুখতে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়করা। জানতে চাইলে সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ বলেন, সরকার নির্ধারিত খাজনার যে রেট রয়েছে তার বাইরে টাকা আদায় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন জিহাদী বলেন, হাটের ইজারাদারদের বাড়তি টাকা আদায় না করতে সর্তক করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেও বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত টোল না দিতে মাইকিং করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে হাটগুলোতে খাজনার চার্ট বা ব্যনার টানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।