ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বগুড়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর। আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ায় মাটির ঘরকে পাকা ঘরে রূপান্তরিত করছে বগুড়ার মানুষেরা। জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর. আদমদীঘি, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ এলাকার নব্বই ভাগ মানুষের ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও শিক্ষার হার বাড়ার কারণে এসব এলাকায় মাটির ঘর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ওই সব এলাকায় মাটির ঘরের জায়গায় শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাকা দালান। বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তন, পারিবারিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে মানুষ এখন আর মাটির ঘরে থাকতে চায়না। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল মানুষজন এখন পাকা দালানের দিকেই ঝুঁকে পড়েছেন। এতে করে দ্রুতই বিলুপ্ত হচ্ছে ‘গরীবের রাজপ্রসাদ’ খ্যাত মাটির ঘর। উপজেলার যেসব জায়গায় লাল মাটি ও এটেল মাটি পাওয়া যেতো সেই সব এলাকার লোকজনই বাড়িতে মাটির ঘর তৈরি করত। লাল মাটি ও এঁটেল মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে প্যাক করা হতো। সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো ২০/৩০ ইঞ্চি চওড়া দেয়াল। প্রতিবার ১/২ ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করে সেই দেয়ালকে ৫/৬ দিন রোদে শুকানো হতো। তারপর এই দেয়াল আবারো ১/২ ফুট উঁচু করে শুকানো হতো। এভাবে পর্যায়ক্রমে ১০/১২ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা হতো।

কাহালু উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের দেয়ালী মাহমুদ জানান, মাটির বাড়ি তৈরি করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে কার্তিক মাস। কারণ এ সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি হাত ঘর নির্মাণে ২০ টাকা করে নিতাম। আবার অনেক সময় ৫/৬ হাজার টাকা চুক্তিতেও ঘর নির্মাণ করে দিতাম। ‘মানুষ এখন আর মাটির ঘর তৈরি করে না যার জন্য আমরা এই পেশা ছেড়ে দিয়েছি।’

প্রবীণ ব্যক্তি ইশারত জানান, আগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছিল মাটির ঘর। বর্তমানে ওইসব গ্রামের হাতেগোনা কিছু বাড়িতে মাটির ঘর থাকলেও অধিকাংশ বাড়িতে দেখা গেছে দালান ঘর ও সেমি-পাকা টিনের ঘর। এ সব এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা বিদেশে গিয়ে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। অনেকে আবার ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছে। দেয়ালের ওপর টিনের চালা বা ছন দিয়ে চালা (ছাউনি) নির্মাণ করা হতো। প্রতিটি ঘর নির্মাণ করত সময় লাগত প্রায় ২/৩ মাস। পরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ঘরের ভেতরের দিকে ধানের তুষ (কুড়া) দিয়ে দেয়ালের ওপর প্রলেপ দেয়া হয়। বাইরের দিকে দেয়া হতো চুনের প্রলেপ বা আলকাতরা। চুনের প্রলেপ দিলে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বাড়ত, তেমনি ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকেও মাটির দেয়াল রক্ষা পেতো। বন্যা বা ভূমিকম্প না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতো। যারা মাটির ঘর নির্মাণের কারিগরদের বলা হতো ‘দেয়ালি’।

নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা গ্রামের বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ছোট বেলায় মাটির ঘরেই বসবাস করেছি। মাটির ঘরে বসবাস খুবই আরামদায়ক। গরমের দিনে ঠান্ডা আর শীতের দিনে শীত লাগত না। বাড়িতে সাতটি বড় বড় মাটির ঘর ছিল। বর্তমানে একটি ঘর ছাড়া বাকি ঘরগুলো ভেঙে সেখানে পাকা দালান নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির ঐতিহ্য হিসেবে এখনো প্রায় শতবর্ষ পুরনো একটি মাটির ঘর রাখা রয়েছে। মাটির ঘর বিলুপ্তির কারণ হিসেবে ছবেদ জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন বিদেশ গিয়ে এখন অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির ঘর-বাড়ি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত