ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লক্ষ্মীপুরে ১১০টি খালে প্রায় তিন হাজার ‘অবৈধ’ বাঁধ

লক্ষ্মীপুরে ১১০টি খালে প্রায় তিন হাজার ‘অবৈধ’ বাঁধ

লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলার বন্যার পানি নামছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। গত পাঁচ দিনে দেড় থেকে দুই ফুট পানি নেমেছে কোথাও কোথাও আরো কম নেমেছে। বেশির ভাগ খালে বাঁধ থাকায় এবং প্রায় এলাকায় ভেসাল জাল (বেয়াল জাল) দিয়ে মাছ ধরার কারণে পানি নামছে ধীরগতিতে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত পানি না নামলে জলাবদ্ধতায় এই অঞ্চলের মানুষকে চরম আকারে ভুগতে হবে। দ্রুত এসব অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে এবং এ সব অবৈধ ভেসাল জাল তুলে দিয়ে পানি চলাচল স্বাভাবিক রাখার দাবি তাদের। এদিকে বন্যার পানিতে এখনো তলিয়ে রয়েছে জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা। পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় প্রায় ১১০টি খাল রয়েছে। এসব খালে প্রায় তিন হাজার বাঁধ রয়েছে। বেশির ভাগ বাঁধ অবৈধভাবে দিয়ে মাছ চাষ করেছেন প্রভাবশালীরা। ফলে বন্যার পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ডাকাতিয়া ও ভূলুয়া নদী, রহমতখালী এবং বিরেন্দ্রখাল পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ। প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী বা খাল মিশেছে মেঘনা নদীতে। এই চারটি খালের আশপাশের পানি কমছে দেড় থেকে দুই ফুট। এ ছাড়া এখনো তলিয়ে আছে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। লক্ষ্মীপুর অংশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পাঁচ যুগ আগে মেঘনা নদীর পাশে নির্মাণ করা হয় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এই বেড়িবাঁধের আশপাশে রয়েছে ঘরবাড়ি ও জেগে ওঠা কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। গত চার দশকে সেই এলাকা দখল কিংবা ইজারা নিয়ে তৈরি করা হয় মাছের ঘের ও পুকুর। আর খালের ওপর নির্মিত বাঁধ তৈরি করে মাছ চাষ করছেন প্রভাবশালীরা। এতে বাধা হয়েছে পানি চলাচলের পথ। মেঘনার জোয়ার, অতিবৃষ্টি ও বন্যার পানি নামতে না পারায় প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ। গত কয়েক দিনের আকস্মিক বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার গ্রামগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ে বাঁধের কারণে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে থাকা জেলার ৫টি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার প্রত্যেকটি এলাকার মানুষ এখনো পানিবন্দি। এদিকে পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও তেমন উন্নতি হয়নি। দুর্ভোগ কাটেনি মানুষের। পানিবন্দি মানুষের দিন কাটছে অর্ধহারে-অনাহারে। কবে নাগাদ বন্যার উন্নতি হয়ে স্বাভাবিক হবে জনজীবন, সেটাও নিশ্চিত নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাসিন্দারা। রামগতির বাসিন্দা জাফর আহমদ গনি ও মজুচৌধুরীর হাটের হেলাল উদ্দিন বলেন, এবারের মতো বন্যা এর আগে দেখা যায়নি। বৃষ্টি না থাকলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে চরম দুর্ভোগে ভানবাসি মানুষ। দুই দিনে ৫-৬ ইঞ্চি পানি কমছে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা ডাকাতিয়া ও রহমতখালী খালসহ বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে মানুষের ভোগান্তি কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। রামগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্লাড ডোর্নাস ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ ফারুক বলেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো খালের ওপর নির্মিত বাঁধগুলো উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে অপসারণ শুরু করেছে। এতে অংশ নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বন্যার অবস্থা স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন ইসলাম জানান এরই মধ্যে আমরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাঁধ অপসারণ করছি।এ কাজ অব্যাহতথাকবে। এখন উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বিরেন্দ্র খালের বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে, এ খালের বর্জ্য অপসারণ সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হলে আশা করা যায় পানি দ্রুত নেমে যাবে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, পানি নামছে ধীরগতিতে। বিভিন্ন খাল দখল করে বহুতল ভবন ও মাছ চাষ করার কারণে মূলত পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে খালের ওপর নির্মিত বাঁধের কারণে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ বাঁধ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এরই মধ্যে দুই শতাধিক স্থানে খালের ওপর বাঁধ কেটে দেয়া হয়। এটি অব্যাহত থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদণ্ডউজ-জামান বলেন, ১১০টি ছোট-বড় খাল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। এ ছাড়া কয়েক হাজার অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবন রয়েছে। এরই মধ্যে ৫০টি বাঁধ কেটে দেয়া হয়। অবৈধভাবে দখল করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। দ্রুত পানি নেমে গেলে বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত