টেন্ডার ছাড়াই জেলা পরিষদের গাছ কেটে সাবাড়

* আর্থিক ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা * ৯৪৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এমএ কবীর, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের মালিকানাধীন গাছ দিনে দুপুরে লুট করা হয়েছে। ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালের সাক্ষী শতবর্ষী শত শত গাছ বিক্রি করা হয়েছে একেবারে পানির দরে। এর মধ্যে সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদের ৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মকর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদুল ইসলাম আতিক এবং একই ইউনিয়নের খুলুমবেড়বাড়ি গ্রামের নাসির উদ্দিন। বিক্রি করা গাছের আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কাটা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সব মিলিয়ে অন্তত ৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে জেলা পরিষদের। আর এসব বিষয়ে অভিযোগের তীর সদ্য অপসারিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশীদের দিকে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) সেলিম রেজা গাছ কেটে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরে জেলা পরিষদের দুই একর পাঁচ শতক জমিতে একটি পুকুর রয়েছে। ২৫ বছর আগে ওই পুকুর পাড়ে এক একর ৫৩ শতক জমিতে শতাধিক গাছ লাগানো হয়। আর এই গাছগুলোর উপর কুনজর পড়ে জেলা পরিষদের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান এম হারুন অর রশিদসহ দুই ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম আতিক ও নাসির উদ্দিনের। এখানকার ৫০টি গাছ নব্বই হাজার টাকা দিয়ে কেনার কথা জানান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের আতিয়ার রহমান মোল্লার ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী রুবেল ইসলাম। রুবেলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম আতিক ও নাসির উদ্দিন গাছগুলো বিক্রি করেন। তিনি আরো জানান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা একটি কাগজ দেয়া হয় তাকে। ৭-৮ মাস আগে ওই কাগজ সূত্রে গাছগুলো কাটেন তিনি। তার আগে কাগজের সঠিকতা জানতে জেলা পরিষদে যান তিনি। সে সময় চেয়ারম্যানের পিএস নাজমুল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গাছ কাটার সময় পিএস নাজমুলসহ জেলা পরিষদের ২-৩ জন কর্মচারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন রুবেল। তবে নাজমুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেন। এদিকে গত মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা পরিষদে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় প্রসেস সার্ভেয়ার আকামত হোসেন মিল্টনকে। তিনি জানান লক্ষ্মীপুরের ৫০টি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। জড়িতদের নামণ্ডঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা এ বিষয়ে বলেন, সরকারি মালিকানাধীন জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুরের একটি গাছও বিক্রি করা হয়নি। বেআইনিভাবে যারা গাছ কাটে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ ও তার পিএস নাজমুল জেলা পরিষদ চত্বরে কেটে রাখা এবং জেলা শহরের আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন চারশ’ বছরের পুরাতন রেন্ট্রি কড়ই গাছ বিক্রি করে আত্মসাৎ করে ফেঁসে যান। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৫৪ হাজার ৭০০ টাকা চালান মাধ্যমে জেলা পরিষদের তহবিলে জমা দেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, উইকেয়ার ফেজ-১ ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) ৬ লেন উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৪৮টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়। ওই গাছের মধ্যে ৪৮টির বেশি গাছের বয়স ছিল কমপক্ষে ৪০০ বছর। বিশেষ প্রজাতির রেন্ট্রি গাছগুলো ব্রিটিশ সরকারের সময়ে সড়কের দুই পাশে লাগানো হয়। জেলা পরিষদের দেয়া তথ্য মতে ৩ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ৯২২ টাকায় ১৫টি লটে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এতে জেলা পরিষদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের গাছের টেন্ডার করা হয়। সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের করা টেন্ডার বাতিল করে কয়েকটি গ্রুপের পুনঃটেন্ডার করা হয়। আগের চেয়ে বেশি দরে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তবে কত টাকা তিনি তা বলতে পারেননি। সদর উপজেলার পদ্মকর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরের পুকুর পাড়ের গাছ বিক্রি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সেই ঘটনা মনে নেই বলে জানান তিনি। এদিকে জেলা পরিষদের বিভিন্ন মার্কেটের দোকান বরাদ্দ নিয়েও রয়েছে তুঘলকি কাণ্ড। যা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই বের করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।