ধানের জেলা দিনাজপুরে এবার সরকারি বোরো সংগ্রহ অভিযানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। এ সংগ্রহ অভিযানে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেও এক ছটাক চালও দেয়নি জেলার ৪১ জন মিল মালিক।
চুক্তি লঙ্ঘন করা মিল মালিকদের জামানত বাজেয়াপ্তসহ খাদ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তবে নানান প্রতিকূল অবস্থার কথা বিবেচনা করে কোনো মিল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির নেতারা। দিনাজপুরসহ সারা দেশে চলতি বছর বোরো সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় গত ৭ মে। সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা ছিল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলায় এবার মিল মালিকদের কাছ থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ১৭ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ১৪ হাজার ৯৫১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধ চাল সরবরাহের জন্য ১২৭০ জন মিল মালিক এবং আতপ চাল সরবরাহের জন্য ১০২ জন মিল মালিক খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে ১ লাখ ২ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টনের মধ্যে সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৯১ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন, ১৭ হাজার ১৩২ মেট্রিক টনের মধ্যে আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন এবং ১৪ হাজার ৯৫১ মেট্রিক টনের মধ্যে ধান সংগ্রহ হয়েছে ১১ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন। জেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকরা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করায় এবং কৃষকরাও ধান সরবরাহে তেমন আগ্রহী না হওয়ায় বোরো সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, দিনাজপুর জেলায় চুক্তিযোগ্য অটোরাইস মিল ২৯০টি এবং হাসকিং মিল ১২১০টি।
এর মধ্যে বোরো সংগ্রহ অভিযানে চুক্তিবন্ধ হয় ২৮৯টি অটোরাইস মিল ও ১০৮৩টি হাসকিং মিল। চুক্তিবদ্ধ এসব মিলের মধ্যে সমুদয় চাল সরবরাহ করে ২৩৬টি অটোরাইস মিল এবং ১০২২টি হাসকিং মিল। আংশিক চাল সরবরাহ করে ৫০টি অটোরাইস মিল এবং ২৩টি হাসকিং মিল। খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেও সংগ্রহ অভিযানে এক ছটাক চালও সরবরাহ করেনি ৩টি অটোরাইস মিল এবং ৩৮টি হাসকিং মিল। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, যেসব মিল মালিক চুক্তি করেও চাল সরবরাহ করেনি, তাদের জামানত বাতিল করা হবে।
দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন বলেন, প্রথম অবস্থায় ১ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করায় মিল মালিকরা জুন মাস পর্যন্ত চাল সরবরাহ করেনি। জুলাই মাসে অতিবৃষ্টির কারণে চাল উৎপাদন করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর আবহাওয়া স্বাভাবিক হলেও বাজারে ধানের দাম বেড়ে যায়। সবশেষ দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন মিল বন্ধ রাখতে হয়। এসব কারণে অনেক মিল মালিকই চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে পারেনি।