পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমড়া আরিফা ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসকের ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। তাদের দাবি আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে এসে জোরজবরদস্তি করে কোনো প্রকার ব্যবস্থা ছাড়াই তরিঘরি করে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে সিজার করতে গিয়ে একটি কিডনি কেটে ফেলে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্বিতীয়বার সেলাই কেটে অপরেশন করতে গেলে অপর কিডনিটাও নস্ট হয়ে যায়। ফলে সে দীর্ঘ ৬ দিন চিকিৎসা নিয়েও মৃত্যুর কাছে হেরে গিয়ে অবশেষে গত ৬ সেপ্টম্বর সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। জানা গেছে, পাবনা সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি ইউনিয়নের নুরদহ ফকিরপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলীর মেয়ে রুশনাই খাতুন (২৬) এর সাথে গত ২১ সালে মেহেরপুর জেলার আলী হোসেনের ছেলে নাজমুলের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর রুশনাই ও নাজমুল ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। ভালোই কাটছিল তাদের সংসার। এরই মধ্যে তাদের সুখের সংসারে খুশির সংবাদ আসে। রুশনাই প্রথম গর্ভবতী হন। স্বামী নাজমুল অনাগত সন্তান তার স্ত্রীর গর্ভে কেমন আছে তা জানার জন্য ঢাকায় একটি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে। সেখানে রিপোর্টে দেখা যায় বাচ্চা ঠিকভাবেই আছে এবং মা ও সুস্থ আছে। পরে ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসায় তার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন স্বামী। এদিকে বাচ্চা ডেলিভারির সময় হয়ে যাওয়ায়, গত ৩১ আগস্ট বিকালে রুশনাইর মা ও বোনসহ আত্মীয়-স্বজন আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা বাজারের ‘আরিফা ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতলে’ নিয়ে যায়। সেখানে কর্তৃপক্ষ আল্ট্রাসনোগ্রাম শেষে জানায় রুশনাইর পেটে পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে, দ্রুত সিজার না করলে বাচ্চা এবং তার মাকে বাঁচানো যাবে না বলে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখায়। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজার বাবদ ১২ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানায়। পরবর্তীতে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় কোনো প্রকার রক্তসহ অন্যান্য ব্যবস্থা না করেই তড়িঘড়ি করে রুশনাইর সিজার সম্পন্ন করা হয়। সিজারের পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। এদিকে সিজারের পর রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাকে আবারো অপারেশন রুমে নিয়ে যায়। এসময় ওই প্রসূতি চিৎকার করে বলছিল তিনি আর ওই অপারেশন রুমে যাবেন না। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় নিয়ে আবারো সেলাই কেটে অপারেশন করেন। প্রসূতি মায়ের অবস্থা পরের দিন ১ সেপ্টেম্বর অবনতি হলে ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিজে রোগীর সাথে যাবে বলে আত্মীয়-স্বজনসহ রোগীকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে আব্দুল খালেক অযুহাত দেখিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। পরে রাজশাহী মেডিকেলে ৬ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর মারা যায়। রুসনাইর মৃত্যু প্রসঙ্গে মা এবং স্বামী নাজমুল জানায়, ডেমড়া আরিফা ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে সিজার করার সময় তার কিডনি কেটে ফেলায় ও অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু ঘটে। তিনি বলেন, আমি তার স্বামী। আমার স্ত্রীর অপারেশন করলে তো অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর লাগে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ভুলভাবে সিজার করে তাকে মেরে ফেলে। রুশনাইর মৃত্যুর জন্য আরিফা ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালের কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে তার পরিবার। সরেজমিন আরিফা ল্যাব অ্যান্ড হসপিটালে খোঁজ নিতে গেলে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাক্তার, নার্স সবাই পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের মালিক আব্দুল খালেকের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এ ধরনের কোনো সিজার তার হাসপাতালে হয়নি। এসময় তার কাছে রেজিস্টার খাতা দেখতে চাইলে নানা টালবাহানা করে দেখাতে অস্বীকার করে। এদিকে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডাক্তার মুনজুর রহমান জানান এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার আমার কাছে মৌখিক বা লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টা জানলাম। যদি কোনো অভিযোগ পাই তবে সে পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হবে।