ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাট-বাজারে পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনে সয়লাব

হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ
হাট-বাজারে পরিবেশ বিধ্বংসী  পলিথিনে সয়লাব

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জসহ নয়টি উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে পরিবেশ বিধ্বংসী নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব হয়ে গেছে সর্বত্রই এখন নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। অবাধে বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে এই নিষিদ্ধ পলিথিন। সকল প্রকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পণ্যসামগ্রীর সাথে এই ব্যাগ দেয়া হচ্ছে। ফলে রাস্তাঘাট নদী-নালা ড্রেন সবকিছুইতেই পলিথিনের আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পলিথিনের শপিং ব্যাগের ক্ষতিকারক বিষয়সমূহ বিবেচনা করে ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল সরকারি এক সিদ্ধান্তে সকল প্রকার পলিথিনের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পরিবহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই প্রজ্ঞাপন জারির পর কিছুদিন পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ ছিল।

কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন জারির পরও আইনি প্রয়োগ না থাকায় মোরেলগঞ্জ পৌরসদর বাজারসহ উপজেলার সর্বত্রই প্রকাশ্যে পলিথিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ছোট বড় মিলিয়ে অর্ধ শতাধিক হাট-বাজার রয়েছে। হাট-বাজার ছাড়াও পাড়ামহল্লা এবং রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে পণ্যসামগ্রী কেনা-বেচার সাথে পলিথিনের ব্যাগ দেয়ায় এর ব্যবহার বেড়েই চলছে। অনায়াসে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করা হলেও নেই কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা। মোরেলগঞ্জ পৌর সদর বাজার, সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, পল্লীমঙ্গল, গুলিশাখালী, আমতলী, তেতুলবাড়িয়া, ফুলহাতা, বহরবুনিয়া, পাঁচগাঁও, সোনাখালী, কালিকাবাড়ি নব্বইরশি বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার ও ছোট-বড় স্থানে হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন। এতে মাটি পানি ও পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে স্থল মাইনের চেয়ে ভয়াবহ। মোরেলগঞ্জবাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন ফরাজি জানান, পলিথিন তুলনামূলক সস্তা ও সহজলভ্য। দামেও কম। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি ব্যাগ বাজারজাত করলে পলিথিনের ভয়াবহতা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যেত।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি শহিদুল হক বাবুল বলেন, বর্তমানে মোরেলগঞ্জের খোলা বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও কাঠোর আইন থাকার পরও পলিথিনের ব্যবহার কমছে না। এজন্য সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসনকেও আরো কঠোর হতে হবে।

মোরেলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম কবির বলেন, পলিথিন পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য দুর্যোগ ও দুর্ভোগ বয়ে আনে। প্লাস্টিকের জীবনচক্রের প্রথম ধাপ হচ্ছে জীবাশ্ম জালানি, অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশন। এই নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার ফলে বায়ু ও পানি দূষণ হচ্ছে এবং নির্গত গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে।

প্লাস্টিক বর্জ্যরে ফলে দূষিত হচ্ছে মাটি এবং এর ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ। তাছাড়া প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা শক্তিও নষ্ট হচ্ছে। নিষিদ্ধ পলিথিন বিশেষ করে নিত্য ব্যবহার্য পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে এখনই যদি কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়া না হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিবেশের ওপর যে বিপজ্জনক পরিণতি নেমে আসবে তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। এ বিষয় মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পলিথিন ব্যবহারের ফলে মাটিতে পঁচে না এবং এতে মাটির উর্বর শক্তি কমিয়ে ফেলে।

একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, এখন আর ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসে না তাই বেচাকেনার স্বার্থে পলিথিনের ব্যাগ দিতে হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান জানান, সরকারিভাবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সেইসাথে পলিথিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন বাজারজাত ও ব্যবহার শুরু হয়। পরে ২০০২ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আইন অমান্যকারীর জন্য ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। বাজারজাতকারীকে ছয় মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত