পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় সক্রিয়
আওয়ামী নামধারী হাতুড়ি বাহিনীর চক্র
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)
যশোরের কেশবপুরে পুলিশ আছে থানায়। পুলিশ ঘুরছে রাস্তায়। পুলিশ যাচ্ছে অপরাধ সংঘটন স্থলেও। তবুও পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না জনসাধারণ। তারা পুলিশ পেলেও পাচ্ছে না সক্রিয় পুলিশ। পুলিশের এ নিক্রিয়তায় সক্রিয় হয়ে উঠছে অপরাধী চক্র। ফ্রি স্টাইলে চলছে অপরাধ। কেশবপুরে প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি ছিনতাই। মাদক স্পটগুলো এখন ওপেন সিক্রেট। কেশবপুরে পুলিশের নিক্রিয়তায় সক্রিয় আওয়ামী নামধারী হাতুড়ি বাহিনীর অপরাধী চক্র। নাগরিকদের কেউ কেউ হাতে তুলে নিচ্ছে আইন। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উপকারী পুলিশ হতে একটু সময় লাগবে। সরেজমিনে ঘুরে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসন আমলে কেশবপুর থানা এবং ফাঁড়ি অথবা ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা নিরীহ মানুষের ওপর জুলুম চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে অর্থবাণিজ্য চালিয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে পুলিশের সখ্যতা ছিল। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথামত পুলিশ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ধরে এনে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থানের মত কেশবপুরে জনরোষের শিকার হওয়ার আশঙ্কা ছিল পুলিশের। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল ভূমিকার কারণে থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পের কোথাও পুলিশ আক্রান্ত হয়নি। পুলিশ স্টেশন গুলোও ছিল নিরাপদ। কেশবপুরে কখনো পুলিশ শূন্য হয়নি। এরপরেও পুলিশের সক্রিয় কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমনকী কেশবপুর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহলও বন্ধ রয়েছে। অপরাধী এবং ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেপ্তারেও মাঠে নেই পুলিশ। পুলিশের এ নিক্রিয়তার সুযোগে চাকুবাজ, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও চোর চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ফলে আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে জনসাধারণ। কেশবপুর শহরের একাধিক ব্যক্তি জানান, পুলিশ রাস্তায় থাকলেও কোনো অভিযান চালাচ্ছে না। কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণও করছে না। সবাই চলছে নিজের ইচ্ছেমত। রাত ৮টার পর শহরের রাস্তা পুলিশ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। চলাচল করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পুলিশের নিক্রিয়তায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় মাদক কারবারীরা। শহরের ট্রাক টার্মিনাল, শ্রীগঞ্জ ব্রিজ, হাসপাতালের পাশে, কালাবাসা মোড় এলাকা, মজিদপুর মোড়, চিংড়া বাজার, মঙ্গলকোট বাজার, কলাগাছি, হাসানপুর এলাকাসহ প্রায় সব মাদক স্পট এখন ওপেন। যে সব আওয়ামী লীগ নেতা ও হাতুড়ি বাহিনীর প্রধান খন্দকার আজিজের থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিল তারা শুধু আড়ালে চলে গেছে। এসব মাদক কারবারি তাদের ছত্রছায়ায় ব্যবসা করে আসছিল। এখন মাদক কারবারীদের এখন বাড়তি খরচ হচ্ছে না। বরং ব্যবসা ভালো চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং শহরে আওয়ামী নামধারী হাতুড়ি বাহিনীর সদস্যরা ভিন্ন নাম পরিচয়ে অপরাধী চক্র চাঁদাবাজি শুরু করেছে বলেও ব্যবসায়িদের কেউ কেউ অভিযোগ করছেন। আওয়ামী লীগ ও হাতুড়ি বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আবার রাতে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই করছে। আর বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে বলে একাধিক অভিযোগ করেছেন সচেতন মহল। পুলিশ মাঠে না থাকা এবং অপরাধ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির যশোর জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ এতোদিন এক ধারায় চলছিল। এখন সব কিছু উল্টে গেছে। এ কারণে পুলিশ বুঝে উঠতে পারছেনা কি ধারায় তারা কাজ করবে। আবার কোনো কোনো পুলিশ হয়তো ইচ্ছে করে কাজ করছে না। তবে পুলিশকে অবশ্য আমাদের প্রয়োজন। পুলিশ মাঠে না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। তিনি বলেন, পুলিশকে এখন নতুন ধারায় কাজ করতে হবে। এ জন্য পুলিশকে একটু সময় দেয়া দরকার। যশোর জলার নবাগত পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এ জেলার কোথাও পুলিশ আক্রান্ত হয়নি। এরপরও পুলিশ ভয় পাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশের ভয় দূর করার চেষ্টা চলছে। তিনি নিজে সব থানা ও ক্যাম্পে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। তা ছাড়া পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থল পরিবর্তনেও তিনি কাজ করছেন। পুলিশ সুপার আশা করেন অবশ্যই জনবান্ধব হবে। মানুষের নিরাপত্তা দিতে অচিরেই পুলিশ মাঠে সক্রিয় হবে।