রামগঞ্জে এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মো. মাসুদ রানা মনি, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর)

লক্ষ্মীপুরের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া অধিকাংশ মানুষ এখনো বাড়ি ফিরতে পারেনি। তাদের বাড়িঘর এখনো পানিতে নিমজ্জিত। তারা জানান হয়ত আরো ১৫ দিন লাগতে পারে বাড়িঘরে ফিরতে। এরই মধ্যে তাদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীধর পাড়া সরকারি প্রাথমিকবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া মো. সাইফুল ইসলাম, আবদুর রশিদ, আজাদ হোসেন জানান গত ৮/১০ দিন যাবত এ এলাকায় কোনো রকম ত্রাণ সামগ্রী আসে না। পরিবার পরিজন নিয়ে বড়ই কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আগে আমরা কেউ হ্যান্ডট্রলি, কেউ রিকশা চালাতাম, আবার কেউ দিন মজুরের কাজ করতাম, কিন্তু বন্যা আসার পর থেকে এখন কোনো কাজ নাই তাই নিদারুণ কষ্টে আছি। সবাই মনে করেছে বন্যা চলে গেছে, পানি নেমে গেছে। কিন্তু কেউ গ্রাম পর্যায়ে প্রত্যন্ত এলাকার খোঁজ খবর নেয় না। হাঁপানিয়া গ্রামের কামাল হোসেন জানান এখনো গ্রামের রাস্তা গুলোতে কোমর সমান পানি। গতকাল বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা, স্কুল কলেজ মাঠে কোথাও হাঁটুপানি কোথাও কোমর পানি। নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের। সারাদিনের কাজ শেষে নৌকায় চড়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য এলাকার বাসিন্দারা। রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের পশ্চিম কাশিম নগর, লামচর, ডাংগাতলী, দরবেশ পুর ইউনিয়নের দরবেশ পুর, সমিতির বাজার, পশ্চিম শোশালিয়া ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট, লক্ষ্মীধর পাড়া হাপানিয়া, মুক্তার পর, দেহলা, দেবনগর, ভাটরা ইউনিয়নের ভাস্করপুর, উত্তর দল্টা, ভাটরা, মাইজপাড়া, হীরাপুর, পাঁচরুখী, বিষ্ণুপুরসহ প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে বন্যার ভয়াবহতা এখনো স্পষ্ট। এ ছাড়াও কাঞ্চনপুর করপাড়া, ইছাপুর, ভাদুর, চন্ডীপুর, ইউনিয়নে দেখা গেছে একই চিত্র। বন্যার পানি অন্য এলাকায় কিছুটা কমলেও এই অঞ্চলের পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। এখনো দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় চুরি ও ডাকাতির ভয়ে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না বেশিরভাগ লোকজন। বরং, নিজেদের ঘরবাড়ি ও প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী রক্ষার জন্য ঝুঁকি নিয়েই পানির মধ্যে বাস করছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে দৈনন্দিন খাদ্য সংস্থান ও রান্না। বন্যার কারণে সৃষ্ট সংকটে অনেকের রান্নার উপকরণ ফুরিয়ে আসছে, খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে, এবং গবাদি পশুগুলোর দেখাশোনা করতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। পশ্চিম কাশিমনগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, উপজেলার পশ্চিম কাশিম নগরের বেশিরভাগ জায়গা এখন পানির নিচে, যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাট প্লাবিত হওয়ায় মানুষজন নৌকার মাধ্যমে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এই দুর্যোগের মাঝেও অনেকেই ভিন্ন কোথাও আশ্রয় নিতে পারছেন না চুরি ও ডাকাতির আতঙ্কে যদিও ঘরে থাকা এখন নিরাপদ নয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গবাদি পশু নিয়ে যাওয়ার সুবিধাও সেখানে নেই, যা স্থানীয় কৃষক ও পশুপালকদের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা এবং এই ক্রান্তিকালে বেঁচে থাকার সংগ্রামে প্রতিনিয়ত নানা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন রামগঞ্জের মানুষ। এই মুহূর্তে তারা অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। তবে কবে সেই পরিস্থিতি বদলাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. শারমিন ইসলাম জানান, দ্রুত পানি নামার জন্য আমরা প্রায় শতাধীক বাধ কেটে দিয়েছি। এ উপজেলার অভিশাপ রামগঞ্জ বিরেন্দ্র খাল সংস্কার ও পরিষ্কারে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। খালের ময়লা অপসারণ করা হচ্ছে, আশা করছি দ্রুত ফলাফল পাবো।